জয়ী হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের চেষ্টা করবেন সংস্কারপন্থী পেজেশকিয়ান

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
28 June 2024, 08:04 AM
UPDATED 28 June 2024, 14:57 PM

আজ সকালে ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে। তিন রক্ষণশীল প্রার্থীর মাঝে একমাত্র সংস্কারপন্থী প্রার্থী হিসেবে দৌড়ে এখনো টিকে আছেন আইনপ্রণেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান (৬৯)।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

এই নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ১০ লাখ। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় কট্টর রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর দেশের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে নির্বাচনের দিনটি ঘোষণা করা হয়।

চার প্রার্থী

প্রার্থী চূড়ান্তের কাজটি করেছে গার্ডিয়ান কাউন্সিল। তিন রক্ষণশীল প্রার্থী পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ, জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাইদ জালিলি  ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোস্তফা পুরমোহাম্মদির পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পান সংস্কারপন্থী আইনপ্রণেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান।

এর আগে তেহরানের মেয়র আলিরেজা জাকানি ও রাইসির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমির-হোসেন গাজিজাদেহ হাশেমি তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।

তিন বছর আগে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনের সব প্রার্থীই ছিলেন রক্ষণশীল।

একমাত্র সংস্কারপন্থী পেজেশকিয়ান

nz.jpg
নির্বাচনের চার প্রার্থী (বাম থেকে ডানে) জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাইদ জালিলি, সংস্কারপন্থী আইনপ্রণেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান, নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোস্তফা পুরমোহাম্মদি এবং পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ। কোলাজ ছবি: সংগৃহীত

বেশ কয়েক বছর ধরে রক্ষণশীলদের হাতে ক্ষমতা থাকলেও পেজেশকিয়ান মনোনয়ন পাওয়ায় সংস্কারপন্থীরা আশার আলো দেখছেন।

ইরানের সর্বশেষ সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ খাতামি পেজেশকিয়ানের প্রশংসা করে তাকে একজন 'সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও যত্নশীল' মানুষ বলে অভিহিত করেন।

১৯৯৭ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন খাতামি। তিনি এর আগে মধ্যপন্থী হাসান রুহানিকেও সমর্থন করেছিলেন, যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার পর পশ্চিমের সঙ্গে ২০১৫ সালে পারমাণবিক চুক্তি সাক্ষরের উদ্যোগ নেন। তবে তিন বছর পর চুক্তির আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দেয়, যা এখনো চলছে।

পেজেশকিয়ান পারমাণবিক চুক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করে পশ্চিমের কাছ থেকে আসা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কও স্বাভাবিক করতে চান তিনি।

তিনি প্রশ্ন করেন, 'আমরা কি আজীবন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরি সম্পর্ক বজায় রাখব, না আমরা এই দেশের সঙ্গে সমস্যাগুলো মেটানোর উদ্যোগ নেব?'

নির্বাচনের প্রেক্ষাপট

trophy_2.jpg
ভোট দেওয়ার পর আঙ্গুলে কালির দাগ দেখাচ্ছেন এক ইরানী নারী। ছবি: রয়টার্স

এমন সময় এই নির্বাচন হচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের অন্যান্য দেশের কাছ থেকে আসা অর্থনৈতিক বিধিনিষেধে জর্জরিত ইরান। পাশাপাশি, ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধ প্রসঙ্গে ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের।

উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনী, উভয়ই ইরানের সমর্থনপুষ্ট বলে দাবি করে পশ্চিমের দেশগুলো। তবে তেহরান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ওয়াহিদি জানান, 'নির্বাচন শুরু হয়েছে'। এটা ইরানের ১৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।

দেশের ৫৮ হাজার ৬৪০ ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্কুল ও মসজিদকে ভোটকেন্দ্রের রূপ দেওয়া হয়েছে।

ভোটের সময় ১০ ঘণ্টা হলেও তা বাড়ানো হতে পারে।

শনিবার সকাল নাগাদ প্রাথমিক ফল পাওয়া যেতে পারে। রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।

যদি কোনো প্রার্থী এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট না পান, তাহলে ৫ জুলাই দ্বিতীয় পর্যায়ের রান-অফ ভোট আয়োজিত হবে। ইরানের ইতিহাসে এর আগে শুধু একবারই এরকম ভোটের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল এবং তা ২০০৫ সালে।

প্রবাসী ইরানী ও বিরোধী পক্ষের সমর্থকরা ভোট বর্জনের আহ্বান করেছেন। তারা এই নির্বাচনকে নির্ভরযোগ্য মনে করে না বলে জানিয়েছে।

ভোট দিয়েছেন খামেনি

ভোট শুরুর অল্প সময় পর দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি ভোট দেন।

untitled_design_-_2023-09-27t114645.446.png
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর হাত নেড়ে অভিবাদন জানালেন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি। ছবি: এএফপি

তিনি সবাইকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, 'নির্বাচনের দিনটি হচ্ছে ইরানীদের জন্য আনন্দ ও উল্লাসের দিন।'

'আমি ভোট দেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নিয়ে এতে অংশগ্রহণ করতে দেশবাসীকে উৎসাহ দিচ্ছি', বলেন তিনি।

তিনি আরও জানান, এমন একজন প্রার্থীকে ভোট দেওয়া উচিৎ, যিনি মনে করেন বিদেশিদের সহায়তা ছাড়াই ইরান সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তবে তিনি একইসঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ও বজায় রাখা প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।

খামেনি এ সপ্তাহে জানান, 'সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থীকে' অবশ্যই এমন একজন হতে হবে যিনি 'প্রকৃত অর্থে ইসলামী বিপ্লবের মূল বিষয়গুলো বিশ্বাস করেন'। ১৯৭৯ সালের এই বিপ্লবে ইরানের তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে।