সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৫৭২ আসন কমেছে

তুহিন শুভ্র অধিকারী
তুহিন শুভ্র অধিকারী
11 November 2025, 05:38 AM
UPDATED 11 November 2025, 14:35 PM

দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে চলতি শিক্ষাবর্ষে মোট ৫৭২টি আসন কমানো হয়েছে। যদিও এর মধ্যেই একটি নতুন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছর আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫,১০০টি। যা গত বছর ছিল ৫,৩৮০টি। অর্থাৎ সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে মোট ২৮০টি আসন কমেছে।

অন্যদিকে, নতুন একটিসহ ৬৬টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন থাকবে ৬,০০১টি। আগের শিক্ষাবর্ষে এই সংখ্যা ছিল ৬,২৯৩টি। সে হিসাবে বেসরকারি খাতে আসন কমেছে ২৯২টি। আর নতুন অনুমোদন পাওয়া ঢাকার ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক মেডিকেল কলেজে আসন যোগ হয়েছে ৫০টি।

তবে, প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে না পারায় দুটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করা হয়েছে। এগুলো হলো—মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর ভুঁইয়া মেডিকেল কলেজ (৫৭ আসন) এবং শরীয়তপুরের মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজ (৫০ আসন)।

স্বাস্থ্যসচিব সাইদুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, মন্ত্রণালয় সব মেডিকেল কলেজের অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, হাসপাতালের সুবিধা এবং অন্যান্য মানদণ্ড বিবেচনা করে একটি সমন্বিত মূল্যায়ন করেছে। তিনি বলেন, মূল্যায়নের ভিত্তিতেই আসন সংখ্যা বাড়ানো বা কমানো হয়েছে। উন্নত চিকিৎসা শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যেই এসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষক, অবকাঠামো ও ল্যাব সুবিধার সংকট থাকা সত্ত্বেও মূল্যায়ন ছাড়াই ১,০৩০টি আসন বাড়ানো হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত তখন ব্যাপক সমালোচিত হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ওই অনুমোদনগুলোর অনেকগুলোই রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হয়েছিল।

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার আসন সংখ্যা যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার ঘোষণা দেয়। তৎকালীন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এবং প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী সাইদুর রহমান মানহীন কিছু মেডিকেল কলেজ বন্ধ বা একীভূত করার কথা বলেছিলেন। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্ভাব্য বিরোধিতার আশঙ্কায় সেই পদক্ষেপ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি।

এদিকে, আজ মঙ্গলবার থেকে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি আবেদন শুরু হচ্ছে। দুটি পরীক্ষাই আগামী ১২ ডিসেম্বর একযোগে অনুষ্ঠিত হবে।

সরকারি মেডিকেল

সরকারি নথি অনুযায়ী, ১৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজে মোট ৩৫৫টি আসন কমানো হলেও ৩টি কলেজে আসন বাড়ানোয় নিট আসন কমেছে ২৮০টি।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, নেত্রকোনা, নওগাঁ, মাগুরা, চাঁদপুর, সিলেটের এমএজি ওসমানী, বরিশালের শের-ই-বাংলা এবং ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ২৫টি করে আসন কমানো হয়েছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ৫টি এবং হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজে সর্বোচ্চ ৫০টি আসন কমানো হয়েছে।

অন্যদিকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ এবং পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে ২৫টি করে মোট ৭৫টি আসন বাড়ানো হয়েছে।

বেসরকারি মেডিকেল

কর্তৃপক্ষ ভর্তি স্থগিত করা দুটি কলেজসহ মোট ১২টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৩৬৭টি আসন কমিয়েছে।

আসন কমানো অন্য ১০টি কলেজ হলো শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ (১৫), ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ (১৫), কিশোরগঞ্জের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ (৪৫), ফরিদপুর ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ (৪০), গাজীপুরের সিটি মেডিকেল কলেজ (৩০), ঢাকার মার্কস মেডিকেল কলেজ (২০), ডেল্টা মেডিকেল কলেজ (১৫), শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ (১৫), ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ (৫০) এবং এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ (১৫)।

এ ছাড়া, প্রয়োজনীয় প্রবিধান মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় আগের মতোই চারটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে না। এগুলো হলো—ঢাকার আইচি মেডিকেল কলেজ ও নর্দার্ন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, রংপুরের নর্দার্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এবং রাজশাহীর শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ।