তিস্তার বুকে শ্যালো বসিয়ে সেচের পানি তুলছেন কৃষক

এস দিলীপ রায়
এস দিলীপ রায়
3 January 2023, 04:04 AM
UPDATED 3 January 2023, 10:41 AM

প্রায় ২ মাস আগেও তিস্তার বুকে পানিপ্রবাহ থাকলেও এখন প্রায় পানি শূন্য। এই নদীর বুকে বালু চরে ডিজেলচালিত শ্যালো পাম্প বসিয়ে সেচের পানি তুলে চাষাবাদ করছেন চাষিরা।

চরাঞ্চলের চাষিরা তিস্তার বুকে বালু চরে আলু, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, পেঁয়াজ, মরিচ ও শাক-সবজি উৎপন্ন করতে কাজ করছেন নিরলসভাবে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা এলাকার কৃষক মেহের আলী আলী (৬০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তা সড়ক সেতুর পাশে নদীর বুকে বালুচরে আলু ও মরিচ চাষ করেছি। পানি দরকার হওয়ায় নদীর বুকে শ্যালো মেশিন বসিয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'কয়েকজন মিলে শ্যালো থেকে সেচের পানি সংগ্রহ করে বালু চরে চাষাবাদ করছি।'

'প্রায় ৮ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি,' উল্লেখ করে একই চরের কৃষক শফিক উদ্দিন (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তায় পানির প্রবাহ নেই। শ্যালো বসিয়ে সেচের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ৩৩-৩৫ ফুট পাইপ বসালে তবে পানি পাওয়া যায়।'

কালীগঞ্জ উপজেলার চর ভোটমারী এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আলু ও মিষ্টি কুমড়া চাষে প্রচুর পানি প্রয়োজন। তিস্তায় তেমন পানি নেই। চারদিকে ধু ধু বালুচর। অনেক দূরে একটি চ্যানেলে কিছুটা প্রবাহ থাকলেও সেখান থেকে পানি আনা কষ্টকর।'

'ডিজেলচালিত শ্যালো পাম্পের সাহায্যে সেচের পানি সরবরাহ করায় চরে ফসল উৎপাদনে খরচ বেড়েছে,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

হাতীবান্ধা উপজেলার চর গড্ডিমারী এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরে ১২ বিঘায় ভুট্টা চাষ করেছি। খেতে প্রতিদিনই সেচের পানি দিতে হয়। তিস্তায় তেমন পানির প্রবাহ না থাকায় শ্যালো বসিয়ে পানি তুলছি।'

'গত ১০-১২ বছর থেকে আমরা এভাবে পানি তুলে চরে চাষ করছি,' যোগ করেন তিনি।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তা ও ধরলার বিশাল চরাঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার কৃষক নানান জাতের ফসল উৎপাদন করেন। আলু, ভুট্টা ও মিষ্টি কুমড়া উৎপন্ন করে তারা জীবনধারণ করেন।'

তিস্তায় প্রবাহ থাকলে সেখান থেকে সেচের পানি খেতে দিলে ফসল উৎপাদনে খরচ কম হতো বলে তিনি জানান।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উজান থেকে পানি না আসায় তিস্তায় প্রবাহ অনেক কমেছে। তিস্তা ব্যারেজের সব গেট বন্ধ। তাই ভাটিতে প্রবাহ আরও কম।'

'তিস্তায় যতটুকু পানি আছে তাও ৫-৬টি চ্যানেলে বিভক্ত হয়ে আছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'তিস্তা খনন করে একটি নির্দিষ্ট চ্যানেলে রূপান্তর করতে পারলে পানি প্রবাহ সচল থাকবে। কৃষকরা লাভবান হবেন। পরিবেশ রক্ষা পাবে।'