যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে যত মুসলিম মেয়র

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
5 November 2025, 12:27 PM
UPDATED 5 November 2025, 19:15 PM

খ্রিষ্টান প্রধান যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং স্থানীয় সরকার পর্যায়ে, বিশেষ করে মেয়র পদে এই অগ্রগতির চিত্র বেশ স্পষ্ট। যদিও দেশটিতে প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার ঘটনাটি বেশ পুরনো, তবে সাম্প্রতিক সময়ে বড় শহরগুলোতে মুসলিম মেয়রদের উত্থান নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মুসলিম মেয়র

১৯৯১ সালে চার্লস বিলাল টেক্সাসের কাউন্টজ শহরের মেয়র নির্বাচিত হন। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত মুসলিম মেয়র। এই ঘটনাটি ছিল মার্কিন রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

charles_bilal.jpg
চার্লস বিলাল। ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য মুসলিম মেয়র

গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ডিয়ারবর্ন এবং হ্যামট্রাম্যাকের মতো শহরগুলোতে, যেখানে মুসলিম ও আরব-আমেরিকান জনসংখ্যা বেশি, সেখানে একাধিক মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

hammoud_ap.jpg
আব্দুল্লাহ হামুদ। ছবি: সংগৃহীত

আব্দুল্লাহ হামুদ মিশিগানের ডিয়ারবর্ন শহরের বর্তমান মেয়র। তিনি ২০২২ সালে নির্বাচিত হন এবং শহরটির ইতিহাসে প্রথম আরব-আমেরিকান এবং প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেন।

হামুদ মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডিয়ারবর্ন শহরে এক লেবানিজ শিয়া মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ট্রাক চালক হিসেবে কাজ করতেন, আর মা, যিনি উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করতে পারেননি, পরে আবার পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং ছোট ব্যবসার মালিক হয়ে ওঠেন।

amer_ghalib.jpg
আমের গালিব। ছবি: সংগৃহীত

আমের গালিব মিশিগানের হ্যামট্রাম্যাক শহরের মেয়র। ২০২১ সালে নির্বাচিত গালিবও শহরটির প্রথম মুসলিম মেয়র।

গালিবের জন্ম ইয়েমেনে। তিনি ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং হ্যামট্রামেক হাইস্কুলে পড়ার সময় গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির একটি কারখানায় কাজ করতেন। 

sadaf_jaffer.jpg
সাদাফ জাফর। ছবি: সংগৃহীত

সাদাফ জাফর ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নিউজার্সির মন্টগোমারি টাউনশিপের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মুসলিম নারী এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত নারী মেয়র।

জাফর শিকাগোতে দক্ষিণ এশীয় মুসলিম অভিবাসী বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেন। তার মা পাকিস্তানে জন্মেছিলেন এবং তার বাবার জন্ম ইয়েমেনে, তবে তার পিতার বাবা-মা ছিলেন ভারতের নাগরিক। তাদের পরিবার মূলত ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের কচ্ছ অঞ্চল থেকে এসেছে।

hameeduddin.jpg
মোহাম্মদ হামিদউদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

মোহাম্মদ হামিদউদ্দিন নিউজার্সির টিনেকের সাবেক মেয়র। তিনি ২০১০ সালে প্রথমবার এবং পরে ২০১৬ সালে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হন।

হামিদউদ্দিন নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কস এলাকায় হায়দরাবাদ থেকে আসা এক ভারতীয় মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮১ সালে পরিবারের সঙ্গে নিউজার্সির টিনেক শহরে চলে যান।

নিউইয়র্ক সিটির ঐতিহাসিক নির্বাচন

সবচেয়ে সাম্প্রতিক এবং আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনাটি হলো গতকালের নির্বাচন, যেখানে জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। 

প্রখ্যাত ভারতীয় চিত্রপরিচালক মীরা নায়ারের ছেলে জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায়, ১৯৯১ সালের ১৮ অক্টোবর। সদ্য ৩৪ বছরে পা দেওয়া এই রাজনীতিকের বাবা মাহমুদ মামদানি ভারতে জন্ম নেওয়া উগান্ডান শিক্ষাবিদ।

afp_20251105_83388f2_v2_highres_newyorkcitymayoralcandidatezohranmamdaniholdsel.jpg
বাবা, মা ও স্ত্রীর সঙ্গে জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

জোহরানের যখন ৫ বছর বয়স তখন তার মা-বাবা তাকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় আসেন। এর দুই বছর পর তারা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে যান নিউইয়র্কে।

মামদানি এখন নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ মেয়র। 

তার এই বিজয়কে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে মুসলিমদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মোট সংখ্যা ও ভবিষ্যৎ

যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় তথ্য সরকারিভাবে ট্র্যাক করা হয় না বলে মোট কতজন মুসলিম মেয়র এসেছেন তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) এবং জেইটিপিএসি'র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২৩৫ জন নির্বাচিত মুসলিম কর্মকর্তা ছিলেন, যার মধ্যে ১২ জন কাউন্সিল মেয়র, চেয়ার বা প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির প্রতিটি নির্বাচনে মুসলিম প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিসংখ্যান নির্দেশ করে যে, স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতিতে মুসলিম আমেরিকানদের পদচারণ আরও জোরালো হচ্ছে, যা মার্কিন সমাজের বহুত্ববাদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।