মহারাষ্ট্রে ১১ মাওবাদী নেতার আত্মসমর্পণ

ডয়চে ভেলে
ডয়চে ভেলে
3 January 2025, 06:41 AM
UPDATED 3 January 2025, 13:00 PM

মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাওয়ের স্ত্রী বিমলা চন্দ সিদাম। দণ্ডকারণ্য জোনাল কমিটির নেতা বিমলা ওরফে তারাক্কার নামে ছত্তিশগড় ও মহারাষ্ট্রে একাধিক মামলা আছে। একটি গোটা থানা জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। সেখানে তার দল হত্যা করেছিল ১৮ জন পুলিশকে। সেই বিমলাই মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। গড়চিরৌলিতে এই আত্মসমর্পণের ঘটনা ঘটেছে।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশের হাত থেকে ভারতীয় সংবিধান গ্রহণ করে আত্মসমর্পণ করেছেন মোট ১১ জন মাওবাদী নেতা। 

সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে প্রাদেশিক নির্বাচন শেষ হয়েছে। বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছে বিজেপি। তারই মধ্যে এই ঘটনা সরকারের বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

যে মাওবাদী নেতারা এদিন আত্মসমর্পণ করেছেন, তাদের অনেকের নামে বড় অংকের পুরষ্কার ধার্য করা হয়েছিল। মাওবাদী সংগঠনে তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন বলেও জানা গেছে।

এরমধ্যে বিমলার আত্মসমর্পণের ঘটনা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি কেবল বেণুগোপালের স্ত্রী নন, কিষেণজির ভাতৃবধূ। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে গুরুত্বপূর্ণ মাওবাদী নেতা ছিলেন কিষেণজি। ২০১১ সালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তার মৃত্যু হয়। বেণুগোপাল ও কিষেণজির হাত ধরেই মাওবাদী সংগঠনে ক্রমশ উন্নতি হয়েছে বিমলার। মাওবাদী আর্মি অর্থাৎ, পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মির (পিএলজিএ) কম্যান্ডার তথা দণ্ডকারণ্যের জোনাল কমিটির নেতা হয়ে উঠেছিলেন বিমলা।

১৯৮৩ সালে মাওবাদী সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন বিমলা। এরপর আর কখনো জঙ্গল ছেড়ে বাইরে আসেননি তিনি। তার নেতৃত্বে গোটা দেশে একাধিক অভিযান হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, অস্ত্রচালনায় অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন বিমলা।

মাওবাদী বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক রৌণক শিবহরি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, 'বেশ কিছুদিন ধরেই ধারণা করা হচ্ছিল যে বিমলা আত্মসমর্পণ করবেন। কারণ শারীরিকভাবে তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। নিয়মিত হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। সে কারণেই সম্ভবত তিনি আত্মসমর্পণ করলেন।'

রৌণক আরও বলেন, 'বিমলা জঙ্গল থেকে আগেই বের হয়ে এসেছিলেন। সরকারের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে তার আলোচনা চলছিল। নির্বাচনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের কাজটি করলেন তিনি।'

মাওবাদীদের গড়চিরৌলি ডিভিশনের নাংশু তুমরেতি ওরফে গিরিধরও আত্মসমর্পণ করেছেন। পুলিশ তার মাথার দাম ধার্য করেছিল ২৫ লাখ রুপি। আত্মসমর্পণকারী ১১ মাওবাদীর মোট মাথার দাম এক কোটি তিন লাখ রুপি।

গিরিধরের স্ত্রী সংগীতা ওরফে ললিতাও এদিন আত্মসমর্পণ করেছেন। এই দুই স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৭০টি মামলা আছে। যার মধ্যে অধিকৈাংশই ফৌজদারি মামলা।

shutterstock_270155984-1140x630.jpg
দণ্ডকারণ্যে মাওবাদী শহিদ বেদী। ছবি: ডয়চে ভেলে

কিছুদিন আগেও মহারাষ্ট্র-ছত্তিশগড় সীমান্ত অঞ্চল থেকে বেশ কিছু মাওবাদী নেতা ও কমান্ডার আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এসব ঘটনায় দণ্ডকারণ্য অঞ্চলে মাওবাদীদের শক্তি ক্রমশ কমতে শুরু করেছে কী না, এ প্রশ্নের জবাবে রৌণক বলেন, 'সাম্প্রতিক কালে যেভাবে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের সংঘাত হয়েছে, তাতে এখনই তাদের শক্তি কমে গেছে এমনটা বলা যায় না।'

তবে রাস্তা ও ক্যাম্প তৈরি করে মাওবাদীদের কিছুটা কোণঠাসা করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

'মাওবাদী সংগঠন থেকে যারা এখন আত্মসমর্পণ করছেন, তারা অধিকাংশই বয়স্ক। সংগঠনের ভেতর তরুণ নেতৃত্বও গড়ে উঠছে। ফলে এই আত্মসমর্পণের ফলে সংগঠন একেবারে ভেঙে যাবে, এমনটা মনে হয় না', যোগ করেন তিনি।