‘ফিস্টুলা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে গণমাধ্যম’

By নিজস্ব সংবাদদাতা, বগুড়া
22 December 2022, 12:18 PM
UPDATED 22 December 2022, 18:45 PM

একবার ফিস্টুলা হলে ভালো হয় না এ ধারণা সঠিক নয়। প্রায় ৯০-৯৭ শতাংশ ফিস্টুলা রোগী সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে ফিস্টুলার চিকিৎসা করানো হচ্ছে বিনামূল্যে।

জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের কারিগরি সহযোগিতায় 'এফআরআরইআই' প্রজেক্টের অধীনে নারীদের জননাঙ্গের ফিস্টুলার বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে আসছে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে অবস্থিত মিশন হাসপাতাল ল্যাম্ব।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়ায় ম্যাক্স মোটেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় এ কথা বলেন ল্যাম্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, এফআরআরইআই- প্রজেক্টের কর্মরত চিকিৎসক, কনসালট্যান্ট এবং বগুড়া ২৫০-শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

নারীর জনন অঙ্গের ফিস্টুলা হলো বিলম্বিত/বাধাগ্রস্ত প্রসবের ফলে অথবা তলপেটে/ জরায়ুতে কোনো অপারেশনের ফলে মাসিকের রাস্তা দিয়ে অনবরত প্রস্রাব বা পায়খানা অথবা উভয়ই ঝরতে থাকা। নারীর এই অবস্থাকে বলা হয় জনন অঙ্গের ফিস্টুলা। এছাড়া বিকৃত যৌনাচারের ফলেও এই রোগ হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল বাংলাদেশের তথ্য মতে, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১০ লাখ নারী এই রোগে ভুগছেন। প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার নারী এই রোগে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন।

বাংলাদেশে বর্তমানে এই রোগে আক্রান্ত প্রায় ২০ হাজার নারী। বাংলাদেশে প্রায় ২ হাজার রোগী প্রতি বছর এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ইউএনএফপিএ ফিস্টুলা বিষয়ক টেকনিক্যাল অফিসার ডা. অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, 'কোনো নারী এই রোগে আক্রান্ত হলে তিনি সামাজিক এবং পারিবারিকভাবে প্রথমে অবহেলার শিকার হন। শরীর থেকে সব সময় প্রস্রাব বা পায়খানার গন্ধ বের হয় বলে কেউ তাদের সঙ্গে মিশতে চায় না। পরিবারেরই তাকে আলাদা করে রাখা হয়। কাপড় সব সময় অপরিষ্কার থাকে বলে তিনি প্রার্থনাও করতে পারেন না। ফলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।'

তিনি আরও বলেন, 'এই রোগীর চিকিৎসার বড় বাধা হচ্ছে তারা রোগের কথা কাউকে বলতে চান না। নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও যান না সেবা নিতে, ফলে দীর্ঘ দিন ধরে পরিবারেই দুর্ভোগের শিকার হন তিনি। এসব ক্ষেত্রে জন সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন গণমাধ্যম কর্মীরা।'

এই রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।

'২০১৬ সাল থেকে এ প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন দিনাজপুরের ল্যাম্ব হাসপাতাল। একইসঙ্গে রোগীর সঙ্গে একজন এটেনডেন্ট ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা বিনামূল্যে করে এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ,' বলেন ডা. অনিমেষ বিশ্বাস।

২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বগুড়ায় এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৪ জন। তাদের মধ্যে ৪ জনের সার্জারি হয়েছে বগুড়া হাসপাতালে এবং ১৪ জনের সার্জারি বিনামূল্যে করিয়েছেন ল্যাম্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান সঞ্চয় বলেন, 'এই রোগের চিকিৎসা সহজ নয়। অনেকটা দীর্ঘমেয়াদী। অনেক সময় ৪ থেকে ৫ শতাংশ সার্জারি করতে হয়। এর পরেও প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ রোগী কখনো সেরে উঠেন না। সরকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণ রোগীর সঙ্গে এসব রোগীর চিকিৎসা করা যায় না। গন্ধের কারণে সাধারণ বেডে এসব রোগীকে রাখা যায় না। এজন্য মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ফিস্টুলা রোগীদের জন্য দুইটি আলাদা বেড করা হয়েছে। সেখানেই তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।'

'সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রধানত ফিস্টুলা রোগী শনাক্ত করে ল্যাম্ব বা এ ধরনের বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। কখনো কখনো আমরা নিজেরাই চিকিৎসা দিয়ে থাকি', বলেন তিনি।

বগুড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন মিন্টুর সভাপতিত্বে সভায় ফিস্টুলা নিয়ে আলোচনা করেন বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান সঞ্চয়, ইউএনএফপিএ ফিস্টুলা বিষয়ক টেকনিক্যাল অফিসার ডা. অনিমেষ বিশ্বাস, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের সহকারী রেজিস্টার ডা. সাদিয়া সুলতানা, ল্যাম্ব হাসপাতালের ফিস্টুলা নির্মূল প্রজেক্টের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের প্রজেক্ট ম্যানেজার মাহাতাব লিটন, ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার ডা. তাহমিনা খাতুন সোনিয়া, জেলা এসআরএইচআর অফিসার ডা. ইশরাত আরা ও ল্যাম্ব হাসপাতালের ফিস্টুলা নির্মূল প্রজেক্টের জেলা সমন্বয়কারী (বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ) শরীফুল ইসলাম শরীফ। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক করতোয়ার বার্তা সম্পাদক প্রদীপ ভট্টাচার্য শংকর এবং দৈনিক করতোয়ার সাংবাদিক নাসিমা সুলতানা ছুটু।