‘ঐতিহ্য’ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা

By স্টার অনলাইন রিপোর্ট
22 September 2025, 08:14 AM

সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় ঢাকা কলেজে অধ্যায়নরত উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

আজ সোমবার কলেজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা তাদের আশঙ্কার কথা জানান।

এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থী নুর উস সাফা।

তিনি বলেন, '১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঢাকা কলেজ গৌরবের সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এখানে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদান চলছে। বর্তমানে শুধু উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েই দুই ব্যাচে পড়াশোনা করছে প্রায় ২ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী।'

তিনি অভিযোগ করেন, 'আমরা এই প্রতিষ্ঠানের অংশীজন। অথচ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পুরো প্রক্রিয়ায় আমাদের কথা শোনা হয়নি।'

নুর উস সাফা জানান, ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে সাত কলেজ নানা একাডেমিক ও প্রশাসনিক সংকটে পড়ে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকার সাত কলেজকে একত্রিত করে 'ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে নুর উস সাফা বলেন, 'কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে, যা অন্যায়।'

রোববার ঢাকা কলেজের একটি প্রতিনিধিদল ইউজিসি চেয়ারম্যান এবং ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশের দাবি জানায়।

তবে কর্তৃপক্ষ আইনি সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে জানায়, এটি তাদের এখতিয়ারভুক্ত নয়।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হিসেবে কলেজ ক্যাম্পাসে যদি স্কুল অব সায়েন্স চালু হয়, তাহলে 'ঢাকা কলেজ' নামটি উপেক্ষিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসের নামফলক থেকে কলেজের নাম সরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যুক্ত করা হলে এটি প্রতিষ্ঠানটির ১৮৪ বছরের ঐতিহ্যের পরিপন্থী হবে।

তাদের মতে, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিক এবং পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস চালু রাখার পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। এতে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে একাডেমিক সমস্যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উচ্চমাধ্যমিক কার্যক্রম বিলুপ্ত করার দাবি উঠতে পারে।

একই ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চমাধ্যমিক কার্যক্রম চালু থাকলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ব্যাহত করতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

পাশাপাশি কলেজের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ভবিষ্যতে কোন কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন স্থানে উচ্চমাধ্যমিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে তারা রাজি নয় বলেও জানান।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণকে তারা স্বাগত জানালেও ঢাকা কলেজের দীর্ঘদিনের পুরুষদের প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশেষ ঐতিহ্য সংকটে পড়বে। এ ক্ষেত্রে তাদের উদ্বেগ শুধুমাত্র 'ঐতিহ্য রক্ষা'র জায়গা থেকে।

তাদের দাবি, ইউজিসি কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করলেও এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই। পুরো প্রক্রিয়ায় উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে তাদের স্বার্থবিরোধী নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিদ্যমান কাঠামোর কোনো পরিবর্তন বা সংকোচন যদি উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে, তা মেনে নেবেন না বলে জানান শিক্ষার্থীরা।