‘বৈষম্যহীন সমাজ নিয়ে কাজ করে তিতুমীর নিজেই বৈষম্যের শিকার’
ইতিহাসে তিতুমীর গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও তার সম্পর্কে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা এখনো সীমিত। তার নাম মানুষের স্মৃতিতে উজ্জ্বল থাকলেও কাজের পরিমাণ অপ্রতুল। বৈষম্যহীন সমাজ নিয়ে কাজ করে নিজেই বৈষম্যের শিকার তিনি। আমাদের সমাজের প্রয়োজনে তাকে নিয়ে আলাপ চলমান রাখা জরুরি।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে ইতিহাস আড্ডার পঞ্চম পর্বে 'তিতুমীরের বিদ্রোহ ও বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন' শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা তিতুমীরের জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে আলোচনায় এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত আলোচনা করেন ডেইলি স্টারের স্পেশাল কনটেন্ট এডিটর সামসুদ্দোজা সাজেন। আলোচক হিসেবে ছিলেন গবেষক অধ্যাপক মিজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক শহিদুল হাসান, 'তিতুমীর: জান অথবা জমিন' বইয়ের লেখক আল আমিন সরল।
মিজানুর রহমান বলেন, মানুষের মুক্তি নিয়ে কাজ করছেন তিতুমীর। বিশেষ করে হিন্দু জমিদারদের অত্যাচারের প্রতিবাদে তিতুমীর ধুতির বদলে 'তাহ্বান্দ' নামে এক ধরনের বস্ত্র পরতে শুরু করেন। তিনি হিন্দু জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের মুসলমানদের ওপর বৈষম্যমূলকভাবে আরোপ করা 'দাড়ির খাজনা' এবং মসজিদের করের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিতুমীরের আন্দোলন কেবল ধর্মীয় সংস্কার ছিল না, বরং এটি ছিল অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসক ও জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগঠিত কৃষকদের প্রতিরোধ, যার লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।
শহিদুল হাসান বলেন, তিতুমীরকে কীভাবে স্মরণ করা হয়, তা নির্ভর করে কে তার সম্পর্কে লিখেছেন তার ওপর। শুরুর দিকে প্রকাশিত বইগুলোতে তাকে একজন ধর্মপ্রাণ এবং শৃঙ্খলাপরায়ণ মুসলমান হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছিল, আবার একইসঙ্গে তাকে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করা হয়েছিল, যা সেই সময়ের ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যেই লেখকের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।
কথাসাহিত্যিক আল আমিন সরল বাংলা সাহিত্যে তিতুমীরের উপন্যাসের অভাব পূরণে তার উপন্যাস 'তিতুমীর: জান অথবা জমিন' লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, যা পাওয়া যায়, তা হয় তাকে কেবল একজন ধর্মীয় সংস্কারক হিসেবে উপস্থাপন করে অথবা শুধুমাত্র একজন ব্রিটিশবিরোধী বিদ্রোহী হিসেবে।
২০১৮ সাল থেকে তিতুমীরকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন শিল্পী ও সাংবাদিক আমিরুল মোমেনীন মানিক। সেখানে ব্যবহৃত একটি গান পরিবেশন করেন তিনি। মানিক তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, বাঁশের কেল্লার স্থানটি এখন স্থানীয় পঞ্চায়েতের হিন্দু ও মুসলিম সদস্যদের মাধ্যমে যৌথভাবে সংরক্ষিত। এই অভিজ্ঞতাগুলো তিতুমীরকে নিয়ে কাজ করার সাহস যুগিয়েছে। তার নামে ২৪ পরগনার একটি বাস স্ট্যান্ড রয়েছে।
শেষে আলোচকদের সঙ্গে শ্রোতাদের কথোপকথন পর্ব। অনুষ্ঠানে ড. আতাউর রহমান, সংগঠক ইকরাম হোসেন, কবি আবিদ আজম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইমরান মাহফুজ।