ভিন্ন রঙের ক্যাপসিকামের পুষ্টিগুণও কি ভিন্ন?

তাফহিমাহ জাহান নাহিন
তাফহিমাহ জাহান নাহিন

খাবারকে রঙ্গিন করে তুলতে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় নানা রঙ্গের ক্যাপসিকাম। এটি 'বেল মরিচ' নামেও পরিচিত। নানা রঙ্গের ক্যাপসিকাম দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি খেতেও সুস্বাদু। ক্যাপসিকাম নানা জাতের হয়, যেমন: লাল, সবুজ, হলুদ, কমলা। তবে আমাদের দেশে লাল ও সবুজ ক্যাপসিকাম বেশি দেখা যায়। দেশীয় সবজি না হলেও এর চাষ ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিভিন্ন খাবারেও এর ব্যবহার বাড়ছে।

কিন্তু ভিন্ন রঙের ক্যাপসিকাম কি ভিন্ন পুষ্টি উপাদান বহন করে? চলুন এ বিষয়ে জেনে নেই দিনাজপুর রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের পুষ্টিবিদ লিনা আক্তারের কাছ থেকে।

এই পুষ্টিবিদ জানান, সব জাতের ক্যাপসিকামের স্বাদ, চেহারা ও গন্ধের মধ্যে পার্থক্য জেনেটিক নয়, বরং রাসায়নিক, পাকা প্রক্রিয়ার চক্রের ওপর পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ ক্যাপসিকাম পরিপক্কতার মাত্রার কারণে পুষ্টির ধরন ভিন্ন হয়। ক্যাপসিকাম সবসময় সবুজ থেকে শুরু হয়। এরপর ধাপে ধাপে হলুদ বা কমলা ও লাল হয়। লাল ক্যাপসিকাম হলো সবচেয়ে পরিপক্ক এবং এটি ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিনের মতো পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। অন্যদিকে সবুজ ক্যাপসিকাম কাঁচা এবং পুষ্টিগুণ কম থাকে। হলুদ ও কমলা মাঝারি পরিপক্ক। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাপসিকামে ক্যাপসাইসিনয়েড এবং ক্যারোটিনয়েড যৌগ থাকায় আমাদের চর্বি কাটতে সাহায্য করে, ক্ষুধা কমাতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে রোগ প্রতিরোধে অবদান রাখতে পারে।

লাল, হলুদ, সবুজ, কমলা ক্যাপসিকামের মধ্যে কোনটি বেশি উপকারী?

লাল ক্যাপসিকাম

সবচেয়ে পরিপক্ক ও পুষ্টিকর হলো লাল ক্যাপসিকাম। এতে প্রচুর ভিটামিন 'সি' রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে লাইকোপেন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা স্তন ও প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। সবুজ ক্যাপসিকামের তুলনায় এতে ১১ গুণ বেশি বিটা ক্যারোটিন, দেড়গুণ বেশি ভিটামিন 'সি' ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন 'এ' রয়েছে। এটি মাইগ্রেন, সাইনাস, ইনফেকশন, দাঁতে ব্যথা, অস্টিওআথ্রাইটিস ইত্যাদি ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকার কারণে এর স্বাদ মিষ্টি ও অনেকটা ফলের মতো হয়। এছাড়া লাল ক্যাপসিকাম খেলে মাথার তালু রক্ত চলাচল বজায় রাখতে, নতুন চুল গজাতে এবং ত্বক পরিষ্কার রাখতে বেশ উপকারী। বিশেষ করে ত্বকের ব্রণ ও র‌্যাশের হাত থেকে রক্ষা করে।

সবুজ ক্যাপসিকাম

সবুজ ক্যাপসিকামে লাল ও হলুদ জাতের ক্যাপসিকামের তুলনায় ভিটামিন 'সি' ও বিটা ক্যারোটিনের পরিমাণ কম থাকে। এটি স্বাদে তেতো এবং চিনির পরিমাণ কম থাকে। সবুজ ক্যাপসিকামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম। এই পটাশিয়াম পেশীর সংকোচন প্রসারণে সাহায্য করে। এছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। পটাশিয়াম বেশি থাকার কারণে বয়স্কদের জন্য ভালো। এতে থাকা ভিটামিন 'সি' রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সংক্রমণ রোধ করে। আরও রয়েছে ভিটামিন 'এ', যা ফুসফুসের কর্মক্ষমতা ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।

সবুজ ক্যাপসিকামে চিনির পরিমাণ কম থাকায় এটি খেলে শরীরে বাড়তি চর্বি জমবে না। ফলে ওজনও বাড়বে না। সবুজ ক্যাপসিকামে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং গ্লুকোজ শোষণকে ধীর স্থিতিশীল করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। অন্যদিকে লাল ক্যাপসিকামে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যার মধ্যে রয়েছে ক্যাপস্যান্থিন, ভিটামিন 'সি'। এটি ডায়াবেটিসের সঙ্গে সম্পর্কিত অক্সিডেটিভ স্ট্রেস মোকাবিলায় সহায়তা করে। বিশেষ করে প্রদাহ কমিয়ে বিপাকীয় স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সহায়তা করে।

কারো ক্ষেত্রে সবুজ ক্যাপসিকাম খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। কারণ এই জাতের ক্যাপসিকামে শর্ট-চেইন কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে, যা ছোট অন্ত্রে শোষিত হয় না।

হলুদ বা কমলা ক্যাপসিকাম

কাঁচা ও পাকার মাঝামাঝি সময়ে এই ক্যাপসিকাম তুলে ফেলা হয়। যার কারণে এটি লাল ক্যাপসিকামের মতো এত মিষ্টি হয় না। এই জন্য হলুদ ক্যাপসিকামে সবুজ ক্যাপসিকামের থেকে বেশি পুষ্টিগুণ থাকলেও লাল ক্যাপসিকামের থেকে পুষ্টিগুণ কম। সবুজ ক্যাপসিকামের তুলনায় এর দ্বিগুণ বেশি ভিটামিন 'সি' রয়েছে। তবে বিটা ক্যারোটিন বা ভিটামিন 'এ'র পরিমাণ সবুজ ক্যাপসিকামের এক-তৃতীয়াংশ।

পরিশেষে বলা যায়, সবুজ ক্যাপসিকাম ফসল তোলার পর বেশি দিন টিকে থাকলেও লাল ক্যাপসিকামে বেশি চিনি এবং পানির কারণে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। সবুজ ক্যাপসিকাম রান্না করা খাবারের জন্য সুস্বাদু, যেখানে লাল ক্যাপসিকাম কাঁচা এবং ভাজা খাবারের স্বাদ বাড়ায়। লাল ক্যাপসিকাম সালাদ বা ডিশ টপিং আকারে পরিবেশন করা হয়। কমলা ক্যাপসিকাম এশিয়ান খাবারে রোস্টের টপিংকস আকারে পরিবেশন করা হয়। হলুদ ক্যাপসিকাম স্টার-ফ্রাই রেসিপিতে সবচেয়ে ভালো ব্যবহার করা হয়।