আন্তর্জাতিক আদালত কী? এই আদালতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা কেমন?

ফাহিমা কানিজ লাভা
ফাহিমা কানিজ লাভা
16 November 2025, 10:10 AM
UPDATED 16 November 2025, 16:36 PM

ধরুন—একসময় যিনি একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধান, আজ তিনি দাঁড়িয়ে আছেন হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাঠগড়ায়। বিচারকরা তাকে জিজ্ঞেস করছেন—গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধে আপনি কি দোষ স্বীকার করছেন?

কিন্তু, প্রশ্ন হলো—আন্তর্জাতিক আদালত কী? বাংলাদেশ কি কখনো আন্তর্জাতিক আদালতে গেছে? কিংবা, বাংলাদেশের কেউ কি কখনো এ ধরনের আদালতে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন?

বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ঘটনার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে হওয়ার কথা উঠেছে। এর মধ্যে একটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ করেছিল, তাদের বিচার।

আরেকটি ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুথ্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনা ও তার ৬৯ সহযোগীর আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার। শেখ হাসিনা নিজেও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি হতে চেয়েছেন।

আসুন জেনে নেই, বর্তমানে সক্রিয় থাকা প্রধান দুটি আন্তর্জাতিক আদালত সম্পর্কে?

বিশ্বে প্রধানত দুটি আন্তর্জাতিক আদালত সবচেয়ে আলোচিত—আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আইসিজে) এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট বা আইসিসি)।

এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রাষ্ট্র বনাম রাষ্ট্রের মধ্যে মামলা হয়। এটি জাতিসংঘের প্রধান বিচার বিভাগ। ১৯৪৫ সালে হেগে প্রতিষ্ঠিত এ আদালতের কাজ হলো রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আইনি বিরোধ নিষ্পত্তি করা। যেমন—সীমান্ত বিরোধ, চুক্তি লঙ্ঘন বা মানবাধিকার লঙ্ঘন।

icj.jpg
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। ছবি: রয়টার্স

২০০৯ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্যে আইসিজেতে একটি মামলা হয়। ২০১২ সালের ১৪ মার্চ আইসিজে রায় দেয়—বাংলাদেশ ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকা থেকে সম্পদ আহরণের অধিকার পাবে। একে বাংলাদেশের বিজয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

অন্যদিকে, ইতালির রোমে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির মাধ্যমে ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গঠিত হয়। এটি ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং আগ্রাসনের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার করে। তবে এই আদালতের শুধু প্রতিষ্ঠার তারিখ অর্থাৎ, ২০০২ সালের পরে সংঘটিত অপরাধের ওপর এখতিয়ার আছে।

dh.jpg
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। ছবি: রয়টার্স

আইসিজে ও আইসিসি কীভাবে কাজ করে?

আইসিজেতে মামলা শুরু হয় শুধু সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে। এক রাষ্ট্র অন্যের বিরুদ্ধে আবেদন দাখিল করে, যা বিশেষ চুক্তি, চুক্তির ধারা ও ঐচ্ছিক ধারার মাধ্যমে হয়।

আবেদনকারী দেশ লিখিত আবেদন করবে। এরপর আইসিজে প্রতিপক্ষ রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানাবে। এরপর লিখিত বক্তব্যে বাদী ও বিবাদী তাদের বিস্তারিত যুক্তি তুলে ধরবে। মেমোরিয়ালে আবেদনকারী পূর্ণাঙ্গ যুক্তি, প্রমাণ, আইনি দলিল দাখিল করবে। কাউন্টার মেমোরিয়ালে বিবাদী তাদের জবাব দেবে। তারপর মৌখিক শুনানি হয়, যেখানে আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন করেন।

১৫ সদস্যের বিচারক প্যানেল গোপনে আলোচনা করে রায় দেয়। এই রায় বাধ্যতামূলক হলেও কার্যকর করার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ওপর নির্ভরশীল, যা আইসিজের বড় দুর্বলতা। জরুরি ক্ষেত্রে অস্থায়ী ব্যবস্থাও (প্রভিশনাল মেজার্স) দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলার প্রক্রিয়াটি একটু ভিন্ন। শুধু সদস্য রাষ্ট্রের অপরাধের ওপরই এখতিয়ার আছে এই আদালতের।

মামলা শুরু হয় প্রসিকিউটরের তদন্ত দিয়ে, যা রাষ্ট্রের রেফারেল, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশন বা নিজ উদ্যোগে হয়। প্রাথমিক যাচাই ও তদন্তের পর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

প্রি-ট্রায়াল চেম্বার অনুমোদন দিলে ট্রায়ালে প্রসিকিউটর বনাম ডিফেন্স, ৩ বিচারক এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। দোষী সাব্যস্ত হলে সাজা হয়, যাবজ্জীবন পর্যন্ত। তবে আপিলের সুযোগ আছে।

কেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে যায়নি?

বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার যুদ্ধাপরাধ নিয়ে আইসিসি বা আইসিজেতে কোনো মামলা হয়নি। আইসিজেতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাত্তরের ভূমিকার জন্য কোনো মামলা করেনি।

আইসিজে অবশ্য ১৯৭২ সালে একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অপরাধকে গণহত্যা বলেছিল, তবে এটা কোনো বিচার না। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ আইসিজের 'ঐচ্ছিক ধারা' মানে না, তাই এর এখতিয়ার সীমিত।

অর্থাৎ, বাংলাদেশ এখনো এই আদালতের আর্টিকেল ৩৬(২) অনুযায়ী বাধ্যতামূলক এখতিয়ার মানবে—এমন ঘোষণা দেয়নি। ফলে আইসিজে বাংলাদেশকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোনো মামলায় জড়াতে পারে না। বাংলাদেশ না চাইলে কোনো দেশ তাকে এই আদালতে নিতে পারবে না।

অন্যদিকে আইসিসিতে ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। তবে ২০০২ সালে গঠিত এই আদালতের শুধু ২০০২ সালের পরের অপরাধের ওপরই এখতিয়ার আছে। ১৯৭১ সালের অপরাধ তার আওতার বাইরে। ফলে বাংলাদেশ আইসিসির সদস্য হলেও এই ঘটনায় কোনো রেফারেল বা তদন্ত করা যায়নি।

পরবর্তীতে বাংলাদেশের দেশীয় আদালতে পাকিস্তানি বাহিনীর স্থানীয় সহযোগীদের (রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস) বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা, ধর্ষণ, হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে ২০০৯ সালে গঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।

২০০৯ থেকে এই আদালতের রায়ে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তবে সমালোচনা রয়েছে, এই বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলেনি।

শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা কি আন্তর্জাতিক আদালতে হবে?

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন।

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, নির্যাতন, ষড়যন্ত্র, উসকানি ও ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়—এই পাঁচটি অভিযোগে বিচার হয়। এ মামলার রায় দেওয়া হবে ১৭ নভেম্বর।

শেখ হাসিনা ও তার ৬৯ সহযোগীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও (আইসিসি) অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এটি রোম স্ট্যাচিউটের আর্টিকেল ১৫-এর অধীনে (প্রসিকিউটরকে তদন্তের অনুরোধ)।

২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান আরেফিনের নেতৃত্বাধীন আইনজীবী দল মামলাটি দায়ের করে। এতে ভিডিও, অডিও, ডকুমেন্টসসহ প্রমাণ জমা দেওয়া হয়েছে। আইসিসির প্রসিকিউটর এখনও প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেনি।

আইসিসি যদি তদন্ত শুরু করে, তাহলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে। তবে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং দেশটি আইসিসির সদস্য নয়। ফলে হাসিনার প্রত্যার্পণে চাপ প্রয়োগ করা কঠিন।

শেখ হাসিনা নিজে অবশ্য আইসিসিতে বিচারের পক্ষে কথা বলেছেন। গত নভেম্বরে প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) ইমেইলে সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সেখানে হাসিনা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস সরকারকে চ্যালেঞ্জ করেছেন যে তারা আইসিসিতে মামলা করুক।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে (আইসিটি) 'ক্যাঙ্গারু কোর্ট' মনে করেন। তার ভাষ্য, হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নিরপেক্ষ। সেখানে বিচার হলে খালাস পাবেন তিনি।

বাংলাদেশ ছাড়াও আইসিজে অনেক দেশ এবং আইসিসিতে অনেক ব্যক্তিই বিচারের মুখোমুখী হয়েছে।

আইসিজেতে কয়েকটি আলোচিত মামলার মধ্যে রয়েছে—

নিকারাগুয়া বনাম যুক্তরাষ্ট্র: ১৯৮৬ সালে নিকারাগুয়া আইসিজেতে অভিযোগ করেছিল, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং কন্ট্রা বিদ্রোহীদের অর্থায়ন করে তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। আইসিজে রায় দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের এই সমর্থন অবৈধ এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই রায় মানেনি।

গাম্বিয়া বনাম মিয়ানমার: সাম্প্রতিককালে 'গাম্বিয়া বনাম মিয়ানমার' মামলা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যার অভিযোগে ২০১৯ সালে মুসলিম দেশগুলোর সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) পক্ষে গাম্বিয়া মামলাটি করে। আইসিজে অস্থায়ী ব্যবস্থায় মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা এবং প্রমাণ ধ্বংস না করার আদেশ দেয়। কিন্তু চূড়ান্ত রায় এখনও আসেনি এবং মিয়ানমার আংশিকভাবে এই রায় অমান্যও করেছে বলে অভিযোগ আছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ইসরায়েল: ২০২৩ সালে করা 'দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ইসরায়েল' মামলা গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আলোচিত। দক্ষিণ আফ্রিকা অভিযোগ করে যে, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল সামরিক অভিযানে 'জাতিগত নিধন' চালিয়েছে। আইসিজে ২০২৪ সালে অস্থায়ীভাবে ইসরায়েলকে জেনোসাইডাল অ্যাক্ট বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। তবে চূড়ান্ত রায় পেতে এখনো দেরি আছে বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও অস্থায়ী রায়ও ইসরায়েল অমান্য করেছে।

আইসিসিতে কয়েকটি আলোচিত মামলার মধ্যে রয়েছে—

সুদানের ওমর আল-বশিরের বিচার: আইসিসি সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ২০০৩ সালে দারফুরে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। যদিও বশির এখনও পলাতক রয়েছেন।

কঙ্গোর জাঁ-পিয়ের বেম্বার মামলা: কঙ্গোর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জাঁ-পিয়ের বেম্বার বিরুদ্ধে মামলা ছিল যুদ্ধাপরাধের প্রথম 'কমান্ড রেসপনসিবিলিটি কনভিকশন'। এটি আন্তর্জাতিক আইনের একটি ধারণা, যেখানে একজন সামরিক বা রাজনৈতিক কমান্ডার তার অধীনস্থদের সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী হন, যদি কমান্ডার এসব অপরাধ প্রতিরোধ, দমন বা শাস্তি দিতে ব্যর্থ হন। আইসিসির জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আওতায় ২০০৮ সালের মে মাসে ব্রাসেলসে গ্রেপ্তার হন বেম্বার। ২০১০ সালের নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে। ২০১৬ সালে রায়ে ১৮ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। তবে দুই বছর পরই আপিলে খালাস পান তিনি।

সুদানের আলি মুহাম্মদ আলি আব্দ-আল-রাহমানের মামলা: ২০২৫ সালের অক্টোবরে সুদানের জানজাউইড নেতা আলি মুহাম্মদ আলি আব্দ-আল-রাহমান দারফুরে যুদ্ধাপরাধের ২৭টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তবে তার শাস্তি এখনও ঘোষিত হয়নি।

তবে ২০০২ সালে আইসিসি গঠনের আগেও কয়েকটি আন্তর্জাতিক আদালত গঠিত হয়েছিল, যেগুলোতে ব্যক্তি দায়িত্বের কারণে অনেকের বিচার হয়। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—

আন্তর্জাতিক মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল (আইএমটি) 

২০০২ সালের আগে এই ধরনের প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত হিসেবে ধরা হয় আন্তর্জাতিক মিলিটারি ট্রাইব্যুনালকে (আইএমটি)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির নাৎসি নেতাদের বিচার হয় ওই দেশেরই নুরেমবার্গ শহরে অবস্থিত এই আদালতে। এই বিচার বিশ্বজুড়ে 'নুরেমবার্গ ট্রায়াল' নামে পরিচিত।

এই আদালত গঠন করেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তি দেশগুলো—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ফ্রান্স। হারমান গোরিং, জোয়াকিম ভন রিবেনট্রপ, আলফ্রেড জোডলসহ ২৪ জন শীর্ষ নাৎসি নেতাকে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে বিচার করা হয় এখানে। ১২ জনকে ফাঁসি, ৩ জনকে আজীবন কারাদণ্ড এবং অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদি জেল দেওয়া হয়। যুদ্ধাপরাধের বিচারের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয় এই বিচারকে। 'মানবতাবিরোধী অপরাধ' শব্দটিও প্রথম এখানে আইনি সংজ্ঞা পায়। পরবর্তীতে এটি আইসিসি (২০০২), সাবেক যুগোস্লাভিয়া ও রুয়ান্ডার গণহত্যার বিচারের ভিত্তি তৈরি করে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ফর্মার যুগোস্লাভিয়া (আইসিটিওয়াই) 

আইসিটিওয়াই ছিল জাতিসংঘের একটি বিশেষ আন্তর্জাতিক আদালত। এটি ১৯৯০-এর দশকে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধগুলোতে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য এটি গঠিত হয়েছিল। ১৯৯৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিচার কার্যক্রম চলে এবং ৯০ জনকে সাজা দেওয়া হয়।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনাল ফর রুয়ান্ডা (আইসিটিআর) 

রুয়ান্ডা গণহত্যা (১৯৯৪ সালের টুটসি গণহত্যা) সম্পর্কিত মামলাগুলোর বিচার হয়েছিল আইসিটিআরে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ১৯৯৪ সালে এই অস্থায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তানজানিয়ার আরুশায়। এই আদালত ১৯৯৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের জন্য ৯৩ জনকে অভিযুক্ত করে এবং ৬১ জনের সাজা হয়। ২০১৫ সালে এটি বন্ধ হয়ে যায়। বাকি কাজ ইন্টারন্যাশনাল রেসিডুয়াল মেকানিজম ফর ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনালস (আইআরএমসিটি) করে।