ক্যাঙ্গারু কোর্ট কী, কোথা থেকে এলো এই নাম
রাজনৈতিক কোনো ঘটনায় জড়িতদের বিচারের সময় 'ক্যাঙ্গারু কোর্ট' শব্দটি প্রায়ই শোনা যায়। যারা এই বিচারের বিরোধিতা করেন তারা সংশ্লিষ্ট আদালতকে 'ক্যাঙ্গারু কোর্ট' বলে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো—'ক্যাঙ্গারু কোর্ট' বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়? কোথা থেকেই বা এলো এই নাম?
'ক্যাঙ্গারু কোর্ট' শব্দবন্ধ থেকে ক্যাঙ্গারুর দেশ অস্ট্রেলিয়ার কথা মনে আসা স্বাভাবিক। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তথ্য বলছে, এই নামটি অস্ট্রেলিয়া থেকে আসেনি। এটি এমন এক বিচারিক প্রহসনের নাম, যেখানে আইন ও ন্যায়বিচারের কোনো তোয়াক্কা করা হয় না। বিশ্বজুড়ে অন্যায্য বিচার প্রক্রিয়াকে বোঝাতে এই কথাটি ব্যবহৃত হয়।
ক্যাঙ্গারু কোর্ট আসলে কী
সহজ কথায়, ক্যাঙ্গারু কোর্ট হলো এমন একটি স্বঘোষিত বা অনানুষ্ঠানিক আদালত, যেখানে বিচারের নামে প্রহসন চলে। এখানে স্বীকৃত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে মনগড়াভাবে রায় ঘোষণা করা হয়। এই ধরনের আদালতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয় না এবং রায় সাধারণত আগে থেকেই ঠিক করা থাকে।
কোনো বিচারিক প্রক্রিয়াকে 'ক্যাঙ্গারু কোর্ট' হিসেবে চিহ্নিত করতে হলে এর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়:
বিচারকের পক্ষপাতিত্ব: বিচারক বা বিচারকমণ্ডলী কোনো এক পক্ষের প্রতি চরমভাবে পক্ষপাতদুষ্ট থাকেন।
পূর্বনির্ধারিত রায়: বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুর আগেই রায় কী হবে, তা ঠিক করা থাকে।
আত্মপক্ষ সমর্থনে বাধা: অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনজীবী নিয়োগ বা নিজের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয় না।
রায় ঘোষণায় তাড়াহুড়ো: স্বাভাবিক বিচারিক প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বিচারকাজ শেষ করা হয়। শেষে আইনের সুবিধামতো ব্যাখ্যা করে রায় দেওয়া হয়।
ক্যাঙ্গারু কোর্ট নামটি কোথা থেকে এলো
ক্যাঙ্গারু কোর্ট নামটি ঠিক কোথা থেকে এসেছে সে সম্পর্কে কিছু প্রচলিত ধারণা রয়েছে। কর্নেল ইউনিভার্সির তথ্য বলছে, উনিশ শতকে আমেরিকায় 'ক্যাঙ্গারু কোর্ট' নামটির প্রচলন হয়। কিন্তু এর উৎস নিয়ে দুটি তত্ত্ব প্রচলিত আছে।
প্রথম তত্ত্বটি বেশ জনপ্রিয়। এই মত অনুসারে, উনিশ শতকের আমেরিকার প্রত্যন্ত সীমান্ত অঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ বিচারকদের অস্তিত্ব ছিল। তারা এক শহর থেকে আরেক শহরে দ্রুত বিচারকাজ শেষ করে ফিস আদায়ে ব্যস্ত থাকতেন। ক্যাঙ্গারুর মতো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় লাফিয়ে লাফিয়ে চলার কারণেই আদালতগুলো ক্যাঙ্গারু কোর্ট নামে পরিচিতি পায়।
দ্বিতীয় তত্ত্বটি 'ক্যালিফোর্নিয়া গোল্ড রাশ' সময়কালের সঙ্গে সম্পর্কিত। ১৮৪৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় সোনা আবিষ্কার হওয়ার পর ভাগ্য বদলের আশায় পুরো যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো মানুষ সেখানে পাড়ি জমায়। সে সময় সোনার খনির মালিকানা নিয়ে প্রচুর বিরোধ হতো। অন্যের খনি দখল করা বা 'ক্লেইম জাম্পিং' ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এসব বিরোধ মেটাতে দ্রুত ও অনানুষ্ঠানিকভাবে আদালত বসানো হতো। এই অস্থায়ী আদালতগুলো ক্যাঙ্গারু কোর্ট নামে পরিচিতি পায়।