কারখানা চালুর আলোচনার মধ্যে বেক্সিমকোর সম্পদ নিলামে তুলছে জনতা ব্যাংক
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত অ্যাপোলো অ্যাপারেলসের ৮১৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ উদ্ধারে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। এমন এক সময়ে ব্যাংকটি নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করল, যখন বেক্সিমকো গ্রুপের কয়েকটি কারখানা পুনরায় চালুর জন্য ২০ মিলিয়ন ডলারের সম্ভাব্য বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা চলছিল।
নিলাম বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস অ্যাপোলো অ্যাপারেলসকে রপ্তানি এলসি ও কন্ট্রাক্টের বিপরীতে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি, ইডিএফ সুবিধা, প্যাকিং ক্রেডিট ও অন্যান্য রপ্তানি কার্যক্রমের জন্য ২৫১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল।
তবে প্রতিষ্ঠানটি এসব ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সুদসহ মোট পাওনা দাঁড়ায় ৮১৬ কোটি টাকা, যা এখন খেলাপি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত।
ব্যাংকটি এখন এই খেলাপি ঋণ উদ্ধারে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, তফসিলে উল্লেখিত ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা স্থাবর ও অস্থাবর তৃতীয় পক্ষের সম্পত্তি এবং ঋণের জামানত হিসেবে রাখা কারখানার মজুত পণ্য নিলামে বিক্রি করা হবে।
আগামী ৭ ডিসেম্বর ঢাকার মতিঝিলে জনতা ব্যাংকের অফিসে এই নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।
এ বিষয়ে জানতে বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস বিভাগের এইচআর ও কমপ্লায়েন্স প্রধান খালিদ শহরিয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে।
খালিদ শাহরিয়ার বলেন, 'আমরা নতুন বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করছি এবং সবকিছু ইতিবাচকভাবে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। ঠিক এমন সময়ে ব্যাংকের এই নোটিশ প্রকাশ সত্যিই আশ্চর্যের।'
তিনি জানান, বিষয়টি আমাদের আইনি টিম পর্যালোচনা করছে।
এর আগে আর্থিক সমস্যার কারণে গত বছর কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয় বেক্সিমকোর টেক্সটাইল বিভাগ। তবে সম্প্রতি তারা কারখানা পুনরায় চালুর পরিকল্পনার কথা জানায়। তারা জানিয়েছিল, জাপান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ রিভাইভাল গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ও রিভাইভাল প্রজেক্টস লিমিটেডের সহায়তায় তারা এগুলো পুনরায় চালুর আলোচনা চালাচ্ছে।
বেক্সিমকো ও রিভাইভালের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফিন্যান্সিং পার্টনার ইকোমিলিও যুক্ত আছে। ইকোমিলি মূলত প্রবাসী বাংলাদেশি পেশাজীবীদের সংগঠন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, রিভাইভাল ও ইকোমিলি প্রথম ধাপে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির মাধ্যমে ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। তবে ভবিষ্যতে কারখানার উৎপাদন এবং বৈশ্বিক চাহিদা বাড়লে এই বিনিয়োগ ১০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
কারখানাটি চলতি বছরের ডিসেম্বরেই উৎপাদনে ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছিল।
এ বিষয়ে জানতে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল ডেইলি স্টার। তবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের শেষে বেক্সিমকো গ্রুপের কাছে জনতা ব্যাংকের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছিল ২২ হাজার ৭৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা খেলাপি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনতা ব্যাংকের মোট ঋণের ২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ দেওয়া হয়েছে বেক্সিমকোর ৩০টি কোম্পানিকে। এর মধ্যে ২৬টি কোম্পানি এককভাবে সর্বোচ্চ ঋণের সীমা (সিঙ্গেল বোরোয়ার এক্সপোজার লিমিট) লঙ্ঘন করেছে।
দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন সালমান এফ রহমান। তিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। তবে সালমান এফ রহমান গত বছরের আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন। তিনি ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্যও ছিলেন।
জনতা ব্যাংকের বেশ কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার মতে, সালমান এফ রহমান জনতা ব্যাংকের বোর্ড ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ব্যাংকিং নিয়ম-কানুন এড়িয়ে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছিলেন। এসব ঋণের বেশিরভাগই এখন খেলাপি।
গত বছরের শেষে জনতা ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭৯৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৮ হাজার ৬৬ কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত।


