৭৫ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি: লঘুদণ্ডে পার পেলেন এনবিআর কর্মকর্তা
রাষ্ট্রের প্রায় ৭৫ কোটি টাকার ক্ষতি সাধনের দায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যুগ্ম কর কমিশনার একেএম শামসুজ্জামানকে লঘুদণ্ড দিয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)।
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের দুই পুত্রের কর ফাইলে অবৈধভাবে ৫০০ কোটি টাকা সাদা করার ঘটনায় এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) এক আদেশে এনবিআর কর্মকর্তা একেএম শামসুজ্জামানকে বেতন গ্রেডে দুই ধাপ অবনমন এর শাস্তি দিয়েছে।
আইআরডি সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানের স্বাক্ষরিত ওই আদেশে তার সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী আনীত অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এই লঘুদণ্ড প্রদান করা হলো। এর ফলে শামসুজ্জামানের মূল বেতন ৬১ হাজার ২০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৫৬ হাজার ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও এনবিআর পৃথক তদন্ত শুরু করে।
দুটি তদন্ত প্রতিবেদনেই বলা হয়, কর কর্মকর্তারা করদাতাদের অবৈধ সুবিধা দিতে নথিপত্রে কারসাজি করেন এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন।
আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর কমিশনার আবদুর রকিবের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, 'একেএম শামসুজ্জামান রাজস্ব পুনরুদ্ধারের জন্য আইন অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করলেও পরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তা স্থগিত করেন।'
প্রতিবেদনে তার অবৈধ সুবিধা গ্রহণের ইঙ্গিতও পাওয়া যায়।
২৩ এপ্রিল জমা দেওয়া এনবিআরের আরেকটি প্রতিবেদনে অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা লিখেছেন, 'একেএম শামসুজ্জামান ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় গিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ইতিবাচক প্রতিবেদন দিতে চাপ দেন।'
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কর কর্মকর্তারা নথি ও রেকর্ডফাইল ঘষামাজা করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেন এবং বিপুল রাজস্ব ক্ষতির পরও পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেননি।
এর আগে, গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে দুদক ও এনবিআর তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে শামসুজ্জামানসহ তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এদের মধ্যে অতিরিক্ত কর কমিশনার সাইফুল আলমকে ২০২৪ সালের ৭ মে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বলেন, 'একেএম শামসুজ্জামান পুনঃতদন্ত করে রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন, তবে ব্যাংকের ভুল প্রতিবেদনের কারণে কার্যক্রম স্থগিত হয়। গুরুতর অপরাধে সরাসরি প্রমাণ না থাকায় তাকে বেতন গ্রেডে দুই ধাপ অবনমন করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, এস আলমের দুই পুত্রকে অবৈধ সুবিধা দিয়ে রাষ্ট্রের ৭৫ কোটি টাকার ক্ষতি প্রমাণিত হওয়ায় একজন কর্মকর্তাকে আগেই অবসরে পাঠানো হয়েছে।
তবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, এ ধরনের অপরাধে জড়িত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেবল লঘুদণ্ড দেওয়া সুশাসনের জন্য বড় বাধা।
তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রের ৭৫ কোটি টাকার ক্ষতি প্রমাণিত হওয়ার পরও শুধু বেতন গ্রেডে অবনমন করা অত্যন্ত অনুচিত। এটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা মাত্র। দুদকসহ চলমান তদন্তগুলো সুষ্ঠুভাবে শেষ করা এবং কর্মকর্তার অতীত কার্যক্রমও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।'
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়ায় অর্থের উৎস যাচাই করা হয় না। এই সুযোগে কিছু কর কর্মকর্তা সরাসরি উপকৃত হন। এনবিআরের এ ঘটনার ক্ষেত্রেও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা দরকার।