ভূমিকম্প পরিমাপের পদ্ধতি কী, কেন দেশে বারবার আসছে ভুল ফলাফল
বাংলাদেশ ভূমিকম্প–ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। গত শুক্রবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত অন্তত তিনবার কেঁপে ওঠে দেশ। সাম্প্রতিক কয়েকটি ভূমিকম্পে প্রথম রিডিং–এ ভুল কেন্দ্রস্থল বা ভিন্নমাত্রার তথ্য পাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে—দেশে কি ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থায় কারিগরি সমস্যা আছে কিনা?
ভূমিকম্প পরিমাপ বিজ্ঞানে যেমন কিছু পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা আছে, তেমনি আছে প্রযুক্তিগত বাস্তবতা।
সিসমোগ্রাফ কীভাবে কম্পন ধরে
ভূমিকম্প শনাক্তের প্রধান যন্ত্র সিসমোগ্রাফ। মাটি কাঁপলেই এর সেন্সর সেই কম্পনের তরঙ্গকে গ্রাফে রেকর্ড করে।
ইউএসজিসির তথ্যমতে, কত জোরে কম্পন হলো, কতক্ষণ স্থায়ী ছিল এবং কী ফ্রিকোয়েন্সিতে তরঙ্গ চলল—সবই সিসমোগ্রাফে ধরা পড়ে। আধুনিক সিসমোগ্রাফ দূরবর্তী ভূমিকম্পও শনাক্ত করতে পারে, তবে নির্দিষ্ট মাত্রা ও অবস্থান বের করতে আরও বিশ্লেষণ দরকার হয়।
মাত্রা কীভাবে নির্ধারণ হয়
১৯৩৫ সালে চার্লস রিখটার ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপের জন্য রিখটার স্কেল তৈরি করেন। এতে কম্পনের সর্বোচ্চ উচ্চতা দেখে মাত্রা নির্ধারণ হয়।
মিশিগান টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি বলছে, মাত্রা ১ বাড়লে ভূমিকম্পের শক্তি প্রায় ৩২ গুণ বেড়ে যায়। কিন্তু বড় ভূমিকম্প মাপতে রিখটার স্কেলের সীমাবদ্ধতা থাকায় এখন মোমেন্ট ম্যাগনিটিউড স্কেল (Mw) ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশে কেন ভুল হচ্ছে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ?
ভূমিকম্পের পর পৃথিবীর ভেতর দিয়ে দুই ধরনের প্রধান তরঙ্গ ছড়ায়। একটি হল প্রাথমিক তরঙ্গ যা সবার আগে সিসমোগ্রাফে পৌঁছায়। সেকেন্ডারি তরঙ্গ পরে পৌঁছায়, কিন্তু মাত্রা ও কেন্দ্রস্থল নির্ধারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এগুলো কোনও কারিগরি ত্রুটির কারণে না। ভূমিকম্পের প্রাথমিক রেজাল্ট দেওয়ার পর আবার দ্বিতীয়বার বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হয়।
তিনি দাবি করেন, প্রাইমারি ওয়েভ থেকে সেকেন্ডারি ওয়েভ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তাই প্রাথমিক তথ্য ভুল হওয়ার মত ঘটনা ঘটে।
ফারজানা আরও বলেন, বিভিন্ন সিসমিক স্টেশনের ডেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেন্দ্রীয় কম্পিউটারে আসে এবং পরে তা আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কেও পাঠানো হয়। এজন্য সঠিক ফলাফল পেতে দেরি হয়।
ইউএসজিসি বলছে, কোনো নির্দিষ্ট ভূমিকম্পের মাত্রা বিভিন্ন সংস্থা ভিন্নভাবে নির্ধারণ করতে পারে—কারণ তাদের পদ্ধতি, তথ্যপ্রাপ্তি এবং ভূকম্পন-সংক্রান্ত তথ্যের নিশ্চয়তা একে অপরের থেকে আলাদা।
প্রতিটি সংস্থা তাদের নিজস্ব প্রয়োজন ও নজরদারি সক্ষমতার ভিত্তিতে মাত্রা নির্ণয়ের আলাদা প্রক্রিয়া ব্যবহার করে থাকে। এমনকি যথেষ্ট তথ্যসমৃদ্ধ ভূমিকম্পের ক্ষেত্রেও ০.২ বা ০.৩ মাত্রার পার্থক্য দেখা যাওয়া খুবই স্বাভাবিক, যা মূলত মাত্রা নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান স্বাভাবিক অনিশ্চয়তারই প্রতিফলন।