শুধু টেপ-টেনিস খেলে বিপিএলে পৌঁছে গিয়েছি, এটা সত্যি নয়: সাকলাইন

সামসুল আরেফীন খান
সামসুল আরেফীন খান

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বাদশ আসরের নিলামের সবচেয়ে বড় বিস্ময়গুলোর মধ্যে একজন হলেন অল্প পরিচিত পেস বোলিং অলরাউন্ডার আব্দুল গাফফার সাকলাইন। তাকে ৪৪ লাখ টাকায় দলে নিয়েছে রাজশাহী ওয়ারিয়র্স— যা তার ১৪ লাখ টাকার ভিত্তিমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। দেশের প্রচলিত কাঠামোর বয়সভিত্তিক স্তর পেরিয়ে না এলেও এই ২৭ বছর বয়সী খেলোয়াড় সম্প্রতি কাতারে অনুষ্ঠিত রাইজিং স্টার্স এশিয়া কাপে শক্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নজর কেড়েছেন।

'দ্য ডেইলি স্টার'-এর সামসুল আরেফীন খানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সাকলাইন ক্রিকেটে তার অপ্রথাগত পথচলা এবং টেপ-টেনিস থেকে শুরু করে সব সংস্করণের খেলোয়াড়ে পরিণত হওয়ার গল্প শুনিয়েছেন। নিচে আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো:

দ্য ডেইলি স্টার: প্রথমবারের মতো বিপিএলে দল পেয়ে কতটা উচ্ছ্বসিত আপনি?

আব্দুল গাফফার সাকলাইন: যে কোনো নতুন খেলোয়াড়ের জন্য এরকম বড় একটি টুর্নামেন্টে সুযোগ পাওয়া সত্যিই দারুণ অনুভূতি দেয়।

ডিএস: আপনার পরিবারের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

সাকলাইন: নিলাম শুরু হওয়ার সময় আমি বাসার বাইরে ছিলাম। যখন ফিরি, ততক্ষণে নিলাম শুরু হয়ে গেছে। আমার মা, ছোট ভাই ও খালা-ফুফুরা বাড়ি থেকে দেখছিলেন। আমার নাম ওঠার পর আমার ভাই খুব রোমাঞ্চিত হয়ে পড়ে। আর আমার মা তখন যথারীতি মাগরিবের নামাজের পর কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন। রাজশাহী যখন আমাকে দলে নেয়, তখন তিনি খুব খুশি হন।

ডিএস: রাইজিং স্টার্স এশিয়া কাপ ও ঘরোয়া ক্রিকেটে শক্ত পারফরম্যান্সের পর বিপিএলে দল পাওয়ার বিষয়ে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন?

সাকলাইন: আমি যেখানেই খেলি, শুধু আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। আমি এই বছরও সেটা করতে পেরেছি— তবে শেষ পর্যন্ত আল্লাহই সব কিছু ঘটিয়েছেন।

ডিএস: আপনি প্রথাগত বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলে উঠে আসেননি। আপনার এই যাত্রাটা কেমন ছিল?

সাকলাইন: আমি কখনও অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৮ বা অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে খেলিনি। আমি আমার এলাকায় খেলা শুরু করি। এক বড় ভাই একবার বলেছিলেন যে, আমার প্রতিভা আছে এবং আমার ক্রিকেট বল দিয়ে চেষ্টা করা উচিত। (নীলফামারী জেলার) সৈয়দপুরে রেলওয়ে মাঠে একটি টুর্নামেন্টে একবার আমি ভালো পারফর্ম করি। এরপর তৃতীয় বিভাগে এক বছর খেলি। আমি গাজী টায়ার্সে দুই বছর কাটাই, সেখান থেকে প্রথম বিভাগে কাকরাইল বয়েজে যাই, এরপর আবার গাজী টায়ার্সে ফিরে আসি। আমরা প্রথম বিভাগে উন্নীত হই এবং চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলার জন্য যোগ্যতা অর্জন করি। সেই একই বছরে প্রিমিয়ার লিগে আমার অভিষেকের আগেই জাতীয় লিগের (এনসিএল) জন্য ডাক পাই। প্রিমিয়ার লিগে আমার প্রথম উইকেট ছিল তামিম ইকবালের, যা আমি কখনও ভুলব না।

ডিএস: অনেকেই বলেন যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এইচপি (হাই-পারফরম্যান্স) প্রোগ্রাম আপনার ক্যারিয়ার বদলে দিয়েছে। সেই সুযোগটি আপনার জন্য কী অর্থ বহন করে?

সাকলাইন: আমি সব সময় একটি ক্যাম্পে যোগ দিতে চেয়েছিলাম, তাই এইচপি ক্যাম্পে সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছিলাম। স্ক্রিনিং, ফিটনেস, মানসিকতা, শক্তি ও শৃঙ্খলার রাখতে সাহায্য করে এইচপি। সেখানকার পরিবেশ আমার খুব ভালো লেগেছিল এবং আমি যথাসম্ভব শেখার চেষ্টা করেছি।

ডিএস: টেপ-টেনিস ক্রিকেটে খেলার দীর্ঘ ইতিহাস আপনার রয়েছে। এটি আপনার ক্যারিয়ারকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে?

সাকলাইন: মানুষ মনে করে, আমি শুধু টেপ-টেনিসের মাধ্যমেই বিপিএলে পৌঁছে গিয়েছি, কিন্তু এটা সত্যি নয়। আমি টেপ-টেনিস খেলেছি, কিন্তু ক্লাব ক্রিকেটও খেলেছি। আমি তৃতীয় ও দ্বিতীয় বিভাগে দুই বছর করে এবং সব মিলিয়ে সাত থেকে আট বছর ক্লাব ক্রিকেট খেলেছি। লিগ মৌসুম শুরুর আগে আমি টেপ-টেনিসে খেল বন্ধ করে দুই মাস প্রস্তুতি নিতাম। ক্লাব ক্রিকেটে আমার পারফরম্যান্সই আমার পুরো ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

ডিএস: রাইজিং স্টার্স এশিয়া কাপ দিয়ে বিদেশের মাটিতে খেলা এবং এখন বিপিএলে ডাক পাওয়ার পর আপনার লক্ষ্য কী?

সাকলাইন: যে কোনো খেলোয়াড়ের মতো আমিও আমার দেশকে (বাংলাদেশ জাতীয় দল) প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখি। আমি দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাই এবং আমি প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন আমাকে সেই লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করেন।