বিশ্বকাপে দেখা যাবে না সেনেগাল-আইভরি কোস্টের সমর্থকদের!
মার্কিন সরকারের নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপে অংশ নিতে আসা আফ্রিকান দেশ সেনেগাল ও আইভরি কোস্টের সমর্থকদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষরিত এক ঘোষণায় এই দুই দেশের নাগরিকদের ওপর আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, আইভরি কোস্ট ও সেনেগালের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে, ইমিগ্র্যান্ট ও নন-ইমিগ্র্যান্ট উভয় ক্ষেত্রেই। এর মধ্যে ব্যবসা ও পর্যটন ভিসা (বি১/বি২) অন্তর্ভুক্ত, যা বিশ্বকাপ দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য প্রয়োজন হয়। ফলে এই দুই দেশের সমর্থকদের বড় একটি অংশ বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারবেন না।
এবারের বিশ্বকাপ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে আগামী বছরের জুন ও জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হবে। নতুন নিষেধাজ্ঞায় খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ও সরাসরি পরিবারের সদস্যদের জন্য ছাড় থাকলেও, সাধারণ সমর্থকদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ছাড় রাখা হয়নি।
গ্রুপ পর্বে সেনেগাল পড়েছে গ্রুপ 'আই'-তে, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স, নরওয়ে এবং বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসা একটি দল (বলিভিয়া, ইরাক বা সুরিনাম)। সেনেগালের ফ্রান্স ও নরওয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি হবে নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে, যা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। তবে প্লে-অফ জয়ী দলের বিপক্ষে তাদের আরেকটি ম্যাচ হবে কানাডার টরন্টোতে, যেখানে অন্তত একটি ম্যাচে সমর্থকদের উপস্থিতির সুযোগ থাকতে পারে। এর আগে ৩১ মে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলের বিপক্ষে সেনেগাল একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে নর্থ ক্যারোলিনার শার্লটে।
অন্যদিকে, গ্রুপ 'ই'-তে থাকা আইভরি কোস্ট খেলবে ইকুয়েডর ও কুরাসাওয়ের বিপক্ষে, দুটি ম্যাচই ফিলাডেলফিয়ার লিংকন ফিন্যান্সিয়াল ফিল্ডে। জার্মানির বিপক্ষে তাদের আরেকটি ম্যাচ হবে কানাডার টরন্টোতে।
হোয়াইট হাউস প্রকাশিত এক তথ্যপত্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পক্ষে যুক্তি হিসেবে ভিসা 'ওভারস্টে' হার উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, আইভরি কোস্টের নাগরিকদের বি১/বি২ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে থাকার মেয়াদ অতিক্রমের হার ৮.৪৭ শতাংশ, আর সেনেগালের ক্ষেত্রে তা ৪.৩০ শতাংশ। শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ভিসায় এই হার আরও বেশি, আইভরি কোস্টে ১৯.০৯ শতাংশ এবং সেনেগালে ১৩.০৭ শতাংশ।
হোয়াইট হাউস জানায়, এই ঘোষণায় স্থায়ী বাসিন্দা, বিদ্যমান ভিসাধারী, কূটনীতিক, ক্রীড়াবিদ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থে প্রবেশ প্রয়োজন, এমন ব্যক্তিদের জন্য ছাড় রয়েছে।
এর আগে জুন মাসে ইরান ও হাইতিসহ ১২টি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন ট্রাম্প। ইরানকে 'সন্ত্রাসে মদদদাতা রাষ্ট্র' আখ্যা দিয়ে এবং হাইতির রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও হাই ওভারস্টে হারের কারণ দেখিয়ে সেই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। হাইতির ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এতটাই সংকটপূর্ণ যে, তাদের জাতীয় দল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের 'হোম ম্যাচ' পর্যন্ত দেশের বাইরে খেলতে বাধ্য হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, 'আমরা প্রেসিডেন্টের নির্দেশ বাস্তবায়ন করছি, যাতে সীমান্ত নিরাপদ থাকে এবং মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।'
বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্বে থাকা হোয়াইট হাউস টাস্কফোর্সের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্ড্রু জুলিয়ানি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'নিরাপত্তাই বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। প্রতিটি ভিসা সিদ্ধান্তই জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত।' তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, ভবিষ্যতে আরও দেশ এই ধরনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে ২০১৭ সালে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর একটি মন্তব্য নতুন করে আলোচনায় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পাওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, 'যে কোনো বিশ্বকাপে শুধু দল নয়, সমর্থক ও কর্মকর্তাদেরও আয়োজক দেশে প্রবেশের সুযোগ থাকতে হবে, নইলে সেটি বিশ্বকাপই নয়।'
নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সেই নীতির সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা নিয়েই এখন ফুটবল বিশ্বে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।