মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ায় ছুরি দিয়ে খুন করে গৃহকর্মী
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের বাসায় চুরি করার সময় ধরা পড়ায় মা-মেয়েক ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন গৃহকর্মী আয়েশা।
আজ বুধবার গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে এ কথা জানান।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত সোমবার সকালে ওই ফ্ল্যাটে লায়লা আফরোজ ও তার মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মাত্র চার দিন আগে কাজে যোগ দেওয়া গৃহকর্মী আয়েশা হত্যার পর নাফিসার স্কুলের ইউনিফর্ম পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান।
মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, অভিযুক্ত গৃহকর্মীকে আজ বুধবার ঝালকাঠিতে তার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার স্বামী মো. রাব্বিকেও আটক করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার আয়েশা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে, চুরি করার উদ্দেশ্যেই তিনি ওই বাড়িতে কাজ নেন এবং ধরা পড়ায় দুই হাতে দুটি ছুরি নিয়ে গৃহকর্ত্রী ও তার মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, শাহজাহান রোডের ফ্ল্যাটে সোমবার সকালে আয়েশা যখন আসেন, তখন সঙ্গে একটি ছুরি নিয়ে আসেন। রান্নাঘর থেকে তিনি আরও একটি ছুরি নেন।
চুরি করার সময় গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ দেখে ফেললে আয়েশা দুই হাতে দুটি ছুরি দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন।
মাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে মেয়ে নাফিসা নওয়াল বিনতে আজিজকেও ছুরিকাঘাত করেন আয়েশা।
লায়লার শরীরে অন্তত ৩০টি এবং নাফিসার শরীরে অন্তত ৬টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
হত্যার পর আয়েশা একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার (চেইন ও কানের দুল) এবং নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আয়েশা সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন।
কিন্তু সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে তিনি যখন ফ্ল্যাট থেকে বের হন, তখন তার কাঁধে একটি ব্যাগ ছিল এবং তিনি নাফিসার স্কুলের পোশাক পরে ছিলেন।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর আয়েশা প্রথমে হেমায়েতপুরে তার স্বামীর বাড়িতে যান এবং গ্রেপ্তারের ভয়ে সারাদিন সেখানেই লুকিয়ে থাকেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি স্বামীর সাথে সদরঘাট যান এবং লঞ্চে ঝালকাঠির উদ্দেশে রওনা হন।
হত্যার ঘটনায় নিহত লায়লার স্বামী ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক এজেডএম আজিজুল ইসলাম ৪ দিন আগে কাজে যোগ দেওয়া আয়েশাকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আয়েশা তার সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন যে, তিনি মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে তার চাচা-চাচির সঙ্গে থাকেন।
অথচ তিনি তার স্বামী ও দেড় বছরের সন্তানের সঙ্গে হেমায়েতপুরে থাকতেন এবং প্রতিদিন ঢাকায় যাওয়া-আসা করতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে যুক্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, 'আমরা তার বক্তব্যে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। এই নৃশংস হত্যার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল কি না বা অন্য কেউ জড়িত ছিল কি না, তা জানতে তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।'