জেড আই খান পান্নাকে যা বললেন ট্রাইব্যুনাল
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (আইসিটি) এ শুনানির সময় হাজির হননি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না।
আসামিপক্ষের আইনজীবী হতে আগ্রহ প্রকাশ করার পর ট্রাইব্যুনাল তাকে অনুমতি দিয়েছিলেন।
কিন্তু আজ বুধবার ট্রাইব্যুনালে তিনি না যাওয়ায়, বিচারক তাকে অবিলম্বে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালে নিযুক্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রারদের আদালত বলেন, আইনজীবী জেড আই খান পান্নার চেম্বারে গিয়ে তাকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিতে। গুমের মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে জেড আই খান পান্নাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
আজ শুনানির শুরুতে অভিযোগ গঠন নিয়ে প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বক্তব্য শুরু করলে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করেন, 'ডিফেন্স আইনজীবী কি মামলা থেকে সরে গেছেন?'
ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ জানতে চান কেন তিনি (পান্না) অনুপস্থিত।
প্রসিকিউটর তাজুল তখন জানান, পান্না রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি লিখে মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন।
এ সময় বিচারপতি শফিউল বলেন, 'শুধু চিঠি দিলেই হবে না, তাকে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে।'
চেয়ারম্যান বলেন, 'আগে তিনি খুব আগ্রহী ছিলেন, এখন আর নন। শুধু চিঠি দিলে হবে না—হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতেই হবে।'
তাজুল আদালতের সামনে আরও উল্লেখ করেন যে, পান্না সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে 'আদালত অবমাননাকর' মন্তব্য করেছেন।
ট্রাইব্যুনাল পান্নার পাঠানো চিঠিটি পড়ে মন্তব্য করেন, 'তিনি কি নিয়ম জানেন না? তিনি নিজেই এসে প্রধান আসামির পক্ষে দাঁড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।'
এ সময় ট্রাইব্যুনাল জানান, প্রধান আসামির আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় শুনানি পুনরায় করতে হতে পারে।
এরপর পান্নাকে ফোন করতে বলা হয় এবং পরে দুই ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে তার চেম্বারে পাঠানো হয়।
অবশেষে হুইলচেয়ারে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন জেড আই খান পান্না। চেয়ারম্যান তাকে মনে করিয়ে দেন, 'আপনি নিজেই আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।'
জবাবে পান্না বলেন, 'না, ট্রাইব্যুনাল মৌখিকভাবে বলেছিলেন। আমিও মৌখিকভাবে গ্রহণ করেছিলাম।'
তিনি জানান, অসুস্থতার কারণে হাজির হতে পারেননি। বলেন, 'আমি অসুস্থ।'
ট্রাইব্যুনাল তার অনুপস্থিতিতে শুনানি শুরু হওয়ায় পুনরায় শুনানি করার কথা বলেন।
চেয়ারম্যান বলেন, 'আপনি চাইলে কাউকে পাঠাতে পারতেন।'
পান্না আবার বলেন, 'আমি অসুস্থ।'
বিচারপতি শফিউল একটি ভিডিওর উল্লেখ করে বলেন, 'ভিডিওতে আপনাকে বলতে শোনা গেছে—"আমার মক্কেল এই বিচার মানেন না, তাহলে আমি কীভাবে আসব।" যদি মক্কেলের আস্থা না থাকে, তাহলে আপনি এসেছিলেন কেন?'
পান্না বলেন, 'আমি দুইপক্ষের চাপের মধ্যে পড়েছি।'
তখন চেয়ারম্যান হেসে বলেন, 'দুই দিকের চাপে আপনার হার্ট অ্যাটাক হবে।'
চেয়ারম্যান আরও বলেন, 'একবার নিয়োগ পেলে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি ছাড়া সরতে পারবেন না।'
এরপর পান্না বলেন, 'আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাইছি।'
এরপর ট্রাইব্যুনাল উপস্থিত আইনজীবী মো. আমির হোসেনকে আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে মত জানতে চান। তিনি সম্মতি জানান।
প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল আবারও উল্লেখ করেন পান্নার মন্তব্য—'আমার মক্কেল বিচার মানে না'—এ মন্তব্য আদালত অবমাননার শামিল।
বিচারপতি শফিউল তখন পান্নাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'মানুষ আপনার মতো সিনিয়র আইনজীবীর কথা শোনে—এ ধরনের মন্তব্য করবেন না।'
চেয়ারম্যান শেষে বলেন, 'আপনার শরীর ভালো নেই। ভবিষ্যতে এ ধরনের মন্তব্য আর করবেন না।'