অ্যালোপেশিয়া: মাথার জায়গায় জায়গায় চুল পড়ে যাওয়া রোগের কারণ ও চিকিৎসা

নুসরাত জাহান
নুসরাত জাহান
11 November 2023, 11:02 AM
UPDATED 11 November 2023, 17:33 PM

মাথাভর্তি ঘন কালো চুল নারী-পুরুষ সবারেই কাম্য। এই মাথাভর্তি চুলের আবেদন ও প্রয়োজনীয়তা মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পায় যখন মাথার ওপর দৃশ্যমান হয় টাক। 

মাথায় কেন জায়গায় জায়গায় গোলাকৃতির টাক পড়ে এবং এর সমাধান কী সে বিষয়ে জেনে নিন গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডার্মাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আরিফুজ্জামানের কাছ থেকে।

ডা. আরিফুজ্জামান বলেন, অনেক সময় অনেক রোগী এসে বলেন, হঠাৎ করেই মাথায় টাক পড়ে গেছে। অর্থাৎ মাথার কোনো অংশে হয়তো গোল হয়ে খালি হয়ে গেছে বা চুল পড়ে ফাঁকা হয়ে গেছে। অনেক সময় রোগী অনেক উদ্বিগ্ন হয়ে যান।

কখনো দেখা যায় রোগী নিজে হয়তো খেয়াল করছেন না, বাসার অন্য কোনো লোক হয়তো খেয়াল করছেন বা নাপিত হয়তো খেয়াল করেন যে মাথার কোনো একটি অংশে চুল নেই। অনেকেই বলে থাকেন বা ভেবে থাকেন, রাতে ঘুমের মধ্যে তেলাপোকা এসে চুল খেয়ে ফেলেছে। তবে এটা একদমই ভ্রান্ত একটি ধারণা। এখানে তেলাপোকার কোনো ভূমিকা নেই। এটি আসলে ত্বকের একটি রোগ বা চুলের একটি রোগ। এই রোগটিকে ডাক্তারি ভাষায় অ্যালোপেশিয়া এরিয়েটা (Alopecia Areata) বলা হয়ে থাকে।

এক্ষেত্রে যেটা হয়, মাথার যে অংশে হঠাৎ চুল পড়ে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে সেই অংশের রোগ প্রতিরোধকারী সেলগুলো হেয়ার ফলিকিউলকে খেয়ে ফেলে। যার ফলে মাথার ওই অংশের চুল পড়ে যায়। এর ফলে এরকম মসৃণভাবে মাথার একটা অংশ হয়তো চুল পড়ে খালি হয়ে যায়।

সাধারণত মাথার ত্বকে এমন হলেও, অনেকের মাথা ছাড়াও অন্য অংশেও এই সমস্যা দেখা যায়। যেমন- অনেকের ভ্রু পড়ে যায়, দাড়ি বা গোঁফেও কোনো একটা অংশে গোল হয়ে ফাঁকা হয়ে যায়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে হাতে, পায়ে বা বুকের লোম পড়ে একটা জায়গা ফাঁকা হয়ে মসৃণ হয়ে যায়। কখনো কখনো একইসঙ্গে একের অধিক জায়গায় এরকম অ্যালোপেশিয়া বা টাকের তৈরি হয়।

তবে ডা. আরিফুজ্জামান বলেন, এই অ্যালোপেশিয়া রোগ নিয়ে খুব বেশি ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। এটি একটি সাধারণ সমস্যা এবং যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ সারিয়ে তোলা যায়। এই ধরনের রোগের চিকিৎসায় সাধারণত রোগীকে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। সাধারণত স্টেরয়েড বা ট্যাক্রোলিমাস জাতীয় কিছু ক্রিম আছে যেগুলো ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার করার পর দেখা যায় অনেকের ক্ষেত্রে নতুন চুল গজাতে শুরু করে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো চিকিৎসা ছাড়াই একটা নির্দিষ্ট সময় পর আপনাআপনি সেই জায়গায় আবার চুল গজাতে শুরু করে।

অনেকেই পেঁয়াজের রস ব্যবহার করেন এবং এর একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। এর ফলেও অনেকের মাথায় নতুন চুল গজাতে শুরু করে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় এই সমস্যা বাড়তেই থাকে এবং ক্রিম বা পেঁয়াজের রস কিছুতেই কাজ হয় না বা এটা আরও ছড়াতে থাকে। সেই রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা মাথার ওই জায়গাটাতে ইনজেকশন দিয়ে থাকেন। সাধারণত এক ধরনের স্টেরয়েড দেওয়া হয়, সেটার একটা নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। কতটুকু জায়গা ফাঁকা হয়েছে সেই অনুযায়ী এর মাত্রা নির্ধারণ করে রোগীর মাথায় দেওয়া হয়।

ইনজেকশনের মাধ্যমে মাসে একবার করে অর্থাৎ চার সপ্তাহ পরপর এই ইনজেকশন দেওয়া হয়। কয়েকটা সেশন নেওয়ার পর দেখা যায় সেই জায়গায় আবার নতুন করে চুল গজাতে শুরু করছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, এটা এত বেশি বিস্তৃত হয়ে গেছে যে একসঙ্গে এত জায়গায় ইনজেকশন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে বেশকিছু খাওয়ার ওষুধও আছে, এর মাধ্যমেও এই টাকের চিকিৎসা করা হয়।