মাইকেলেঞ্জেলোর ভাস্কর্য-চিত্রকর্ম দেখতে যেতে পারেন ৫ দর্শনীয় স্থানে

By পূজা সরকার
21 March 2023, 06:59 AM
UPDATED 21 March 2023, 17:06 PM

মাইকেলেঞ্জেলোর চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্যগুলোর রয়েছে এক অনন্য তীব্রতা, শারীরিক বাস্তবতা এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। রেনেসাঁর অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পী হিসেবে তার বিখ্যাত কাজগুলোর মধ্যে পিয়েতা (১৪৯৯) এবং ডেভিড (১৫০১) প্রথম নজর কাড়ে; যখন এই ইতালীয় শিল্পী কেবল পার করছেন তার ২০-এর দশক। 

আর সিস্টিন চ্যাপেলে সিলিং ফ্রেস্কোগুলো তার খ্যাতিকে করেছে দৃঢ় এবং অমর।

এই প্রতিভাবান শিল্পীর জন্ম মার্চ মাসে। এই উপলক্ষে তার কিছু দুর্দান্ত শিল্পকর্ম দেখতে যেতে পারেন যে জায়গাগুলোতে-
 
একাডেমিয়া গ্যালারি অব ফ্লোরেন্স

কারারা মার্বেল দিয়ে তৈরি ডেভিডের মূর্তিটি পুরুষোচিত সৌন্দর্যের এক নিখুঁত উপস্থাপনা এবং স্বাধীনতা ও ক্ষমতার প্রতীক ফ্লোরেন্স শহরের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি তৈরির পরই মাইকেলেঞ্জেলোর 'ডেভিড' হয়ে ওঠে শহরটির প্রতিনিধি এবং রেনেসাঁর প্রতীক হিসেবে নতুন তাৎপর্য অর্জন করে। 

এটি বর্তমানে রয়েছে ফ্লোরেন্সের অ্যাকাডেমিয়া গ্যালারিতে। একই সঙ্গে এই গ্যালারির কাছাকাছিই রয়েছে স্থানিক নকশায় শৈল্পিকভাবে স্বতন্ত্র পিয়াজা ডেল ডুমো। যাতে রয়েছে ৪টি স্থাপত্যের মাস্টারপিস— দ্য চার্চ, দ্য ব্যাপ্টিস্টারি, বেল টাওয়ার এবং ক্যাম্পো সান্টো।

সিস্টিন চ্যাপেল, রোম

রোমের সিস্টিন চ্যাপেলের বেদীর পেছনে দেওয়ালে ফ্রেস্কো (একটি ম্যুরাল আর্টওয়ার্ক)-এর শিরোনাম দ্য লাস্ট জাজমেন্ট। এটিকে বিবেচনা করা হয়, খ্রিষ্টধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সবচেয়ে শক্তিশালী চিত্রগুলোর মধ্যে একটি। দেওয়াল প্রাচীরের প্রান্ত ৩০০টিরও বেশি পেশীবহুল শরীর দিয়ে ছেয়ে আছে, প্রদর্শিত হচ্ছে অগণিত গতিশীল ভঙ্গিমা। 'দ্য লাস্ট জাজমেন্ট'-কে সাধারণ ছবির মতো কোনো সীমানা এঁকে শেষ করা হয়নি বরং দেয়াল আর ছাদের এসব দৃশ্যই এর সীমানা। এটি খ্রিষ্টের দ্বিতীয় আবির্ভাব এবং সমস্ত মানবজাতির সঙ্গে ঈশ্বরের চূড়ান্ত এবং চিরন্তন বিচারকে প্রতিফলিত করে।

3.jpg
ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও সমসাময়িক শিল্পচর্চায় সবচেয়ে সুপরিচিত কাজগুলোর মধ্যে একটি রয়েছে সিস্টিন চ্যাপেলে-দ্য ক্রিয়েশন অব অ্যাডাম। ঐশ্বরিক জীবনের নিঃশ্বাসের প্রতীক হিসেবে ঈশ্বর এবং অ্যাডামের আঙ্গুলের ডগা একে অপরকে প্রায় স্পর্শ করার মতো করে এটি চিত্রিত করেছেন মাইকেলেঞ্জেলো। অ্যাডামের পৃথিবীতে আবির্ভাব এবং পৃথিবীর সঙ্গে ঈশ্বরের যোগাযোগের ইঙ্গিতপূর্ণ এই চিত্রকর্ম।

4.jpg
ছবি: সংগৃহীত

সেন্ট পিটার'স ব্যাসিলিকা, ভ্যাটিকান সিটি

মাইকেলেঞ্জেলো স্বাক্ষরিত একমাত্র শিল্পকর্ম 'পিয়েতা' অবস্থিত এই গীর্জায়। ভাস্কর্যে উপস্থিত মাতা মেরির কোলে ক্রুশবিদ্ধ যিশুর প্রাণহীন দেহ দেখানো হয়েছে। ১৪৯৯ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে এটি শেষ করেন তিনি, যা ছিল রোমে এই তরুণ শিল্পীর প্রথম গণস্বীকৃতি। এনে দেয় খ্যাতি, নিয়ে যায় অমরত্বের পথে। প্রাকৃতিক এবং রেনেঁসার শাস্ত্রীয় সৌন্দর্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কারণে এটি এত তাৎপর্যপূর্ণ।

রিওন মন্টি, রোম

ইতালীয় শিল্পের অন্যতম সেরা কাজ পরিচিত মোজেস নামে, ভিনকোলির সান পিয়েত্রোর মনোমুগ্ধকর চার্চে রোমের মনোরম রিওন মন্টির পাশে যেন একরকম লুকিয়ে রাখা এটি। এতে দেখানো হয় মাথায় শিংসহ বাইবেলের চরিত্র মোজেসকে (সেসময় ব্যবহৃত বাইবেলের ল্যাটিন সংস্করণ, ভালগেটের এক্সোডাস-এর অধ্যায়ে ৩৪-এর একটি বর্ণনা অনুযায়ী)। ১৫০৫ সালে পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস তার সমাধির জন্য এতে প্রণোদনা দেন। মাইকেলেঞ্জেলোর প্রগতিশীল উপস্থাপনা মোজেস যেন ঈশ্বরের ইচ্ছা ও ক্ষমতাকে যেন নির্দেশ করে।

6.jpg
ছবি: সংগৃহীত

সান্টো স্পিরিটো, ফ্লোরেন্স

মাইকেলেঞ্জেলোর ক্রুসিফিক্স (১৪৯২) বর্তমানে ইতালির ফ্লোরেন্সের সান্টো স্পিরিটোতে অবস্থিত। মাইকেলেঞ্জেলো খালি বুকের এই ভাস্কর্যটি তৈরি করেন মাত্র ১৮ বছর বয়সে। নিপুঁণভাবে তৈরি ক্রসটি তখন মাইকেলেঞ্জেলোর কর্মজীবনে তেমন প্রভাব বিস্তার করেনি এবং একসময় মানুষজন এটির কথা ভুলে যায়। প্রজন্মের জন্য হারিয়ে গেছে বলে মনে করা হলেও ক্রুসিফিক্সটি ১৯৬২ সালে পুনঃআবিষ্কৃত হয় এবং পরে ফ্লোরেন্সে ফেরানো হয়, যেখানে এটি প্রথমে রাখা হয়েছিল।

7.jpg
ছবি: সংগৃহীত

বেশিরভাগ রেনেসাঁ শিল্পী ঐতিহাসিক ভাস্কর্য এবং বাস্তব মানুষ দেখে মানব রূপ সম্পর্কে শিখলেও মাইকেলেঞ্জেলো দেখতেন শবব্যবচ্ছেদ, এই পদক্ষেপটিই তার চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্যগুলোকে আজও আলাদা করে তুলেছে। কেবল মার্বেল থেকে মূর্তি-এমনটাই দাবি করলেও নিজের কাজের বর্ণনা বলে দেয় সতর্ক প্রস্তুতি এবং কাজের প্রতি গভীর মনোযোগ তার শিল্পকে মন্ত্রমুগ্ধ করে তোলে।

অনুবাদ: তানজিনা আলম