ভেনেজুয়েলায় হামলা নিয়ে ট্রাম্পের অন্তর্দ্বন্দ্ব

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
2 December 2025, 06:43 AM

পরপর দুই দিনে ঘটলো দুটি ঘটনা। প্রথমটি ঘটেছে গত শনিবার। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার মাধ্যমে জানা যায়, মহাক্ষমতাধর মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার আকাশ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। বিস্তারিত কিছু না জানিয়েই তিনি এমন ঘোষণা দিলেন।

এর পরের দিন তথা রোববার ঘটে অনেকটা উল্টো ঘটনা। সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়—ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরোকে চার দিন পর জনসম্মুখে দেখা গেছে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে মাদুরো দেশ ছেড়েছেন। কিন্তু, তার উপস্থিতির মাধ্যমে সে ধারণা উবে যায়।

সিএনএন শিরোনাম করে, ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে দেখা গেল মাদুরোকে। কেননা, ট্রাম্প বলেছেন যে তিনি ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছেন। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, ভেনেজুয়েলা হামলা থেকে আসলে কত দূরে ট্রাম্প?

Maduro
নিকোলাস মাদুরো নিজ দেশে বেশ জনপ্রিয়। ছবি: রয়টার্স

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, অনলাইনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে যে দর্শকদের সামনে মাদুরো বসে আছেন। তিনি শীর্ষ কফি উৎপাদকদের হাতে পদক তুলে দিচ্ছেন। কফি খেতে খেতে কথা বলতেও দেখা গেল তাকে। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তাকে সরাসরি কথা বলতে শোনা যায়নি।

সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়—অনুষ্ঠানের শেষদিকে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে মাদুরো স্লোগান দেন—ভেনেজুয়েলা 'অপ্রতিরোধ্য', 'দুর্বার' ও 'অজেয়'।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাষায়—মাদক চোরাচালান রোধ করতে প্রায় এক ডজন যুদ্ধজাহাজ ও প্রায় ১৫ হাজার সেনা ভেনেজুয়েলার আশেপাশে মোতায়েন করা হয়েছে। আর ভেনেজুয়েলার ভাষায়—মাদুরোকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরাতে মরিয়া ট্রাম্প।

শীর্ষ কফি উৎপাদকদের পদক দেওয়া অনুষ্ঠানে মাদুরোর উপস্থিতির অল্প সময় আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন যে তিনি টেলিফোনে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছেন।

এয়ার ফোর্স ওয়ান-এ সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, 'আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে জবাব হচ্ছে—হ্যাঁ। আমি বলতে পারবো না পরিস্থিতি ভালো না খারাপ হবে। তবে ফোনে কথা বলেছি।'

Trump
সেনাপ্রধানের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এমন রণসজ্জাকে লাতিন আমেরিকায় 'উপনিবেশিক হুমকি' হিসেবে দেখছে ভেনেজুয়েলা। অনেকদিন থেকে রাষ্ট্রপতি মাদুরো বলছেন যে ভেনেজুয়েলায় সামরিক অভিযানের ছুতো খুঁজছে ওয়াশিংটন।

এ দিকে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভেনেজুয়েলাও নিয়মিত সামরিক মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। সম্ভাব্য মার্কিন হামলা থেকে রক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে সেখানে বড় আকারে সেনা সমাবেশ চলছে।

গত সেপ্টেম্বরে কথিত মাদকবাহী কয়েকটি নৌকায় কয়েক দফা মার্কিন হামলার পর দক্ষিণ ক্যারিবীয় অঞ্চলে প্রচুর সংখ্যক সেনা পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন। সেসব নৌকায় মাদক ছিল কিনা তা ট্রাম্প প্রশাসন নিশ্চিত করেনি। তবে সেসব হামলায় অন্তত ৮৩ জন নিহত হন।

venezuela_airspace.jpg
ভেনেজুয়েলার আকাশ সীমানা। ছবি: সংগৃহীত

তাহলে ট্রাম্প কি এখন ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা বন্ধ করে সেখানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন?

গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার মাদুরোর বিরুদ্ধে হুমকি দিতে শুরু করেন। কারাকাসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক চোরাচালান ও অবৈধ অভিবাসী ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। ভেনেজুয়েলা থেকে তেল কেনার চুক্তি বাতিল করেন। যেসব দেশ ভেনেজুয়েলা থেকে তেল কেনে সেসব দেশের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসান। মাদুরোকে 'বৈশ্বিক সন্ত্রাসী নেতা' আখ্যা দিয়ে তাকে ধরার জন্য পুরস্কার দ্বিগুণ তথা ৫০ মিলিয়ন ডলার করেন।

সম্প্রতি, ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান যে তিনি সিআইএ-কে ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ডকে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানসহ অন্যান্য অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র সেখানে আছে।

গত ২৭ নভেম্বর ট্রাম্প বলেছিলেন, যেকোনো সময় ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলা শুরু হতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন রাষ্ট্রপতি এটাও জানালেন যে তিনি ভেনেজুয়েলার মাদুরোর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন।

ট্রাম্প সেসময় সাংবাদিকদের আরও বলেছিলেন, 'আমরা যদি সহজে সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচাতে পারি তা করা ভালো। যদি সহজে তা না পারি তাও ভালো।'

protest_venezuela.jpg
ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলার বিরুদ্ধে কারাকাসে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

তবে ঘটনার শেষ এখানেই নয়।

আজ মঙ্গলবার সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়—ভেনেজুয়েলায় হামলা নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্বে ভুগছেন ট্রাম্প।

এতে আরও বলা হয়, ভেনেজুয়েলায় ক্ষমতাসীন মাদুরো প্রশাসনকে সরানোর জন্য ট্রাম্প যে ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন তা কৌশলগত, রাজনৈতিক ও আইনি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

আর, এসব কারণেই কি ভেনেজুয়েলায় হামলা নিয়ে মহাক্ষমতাধর ট্রাম্প অন্তর্দ্বন্দ্বে পড়েছেন?