গাজা যুদ্ধে কোন পক্ষে জোহরান মামদানি?
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে শহরটির বাসিন্দারা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানিকে বেছে নিয়েছেন। ৩৪ বছর বয়সী মামদানি নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন। মঙ্গলবার এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
জোহরান ক্বোয়ামে মামদানি নিজেকে একজন ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি উগান্ডার শিক্ষাবিদ মাহমুদ মামদানি ও ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের ছেলে। সাত বছর বয়সে তিনি নিউইয়র্কে চলে আসেন এবং বোডইন কলেজ থেকে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
মামদানি নিউইয়র্কের তরুণ ও নতুন প্রজন্মের ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন তৈরি করতে পেরেছিলেন। এর অন্যতম কারণ হলো, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে নিজের কঠোর সমালোচনামূলক অবস্থান। ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, আমি সব সময় স্পষ্ট ভাষায় এবং সত্যের ভিত্তিতে বলব, ইসরায়েল (গাজায়) গণহত্যা চালাচ্ছে।
তিনি বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট ও স্যানকশনস (বিডিএস) আন্দোলনেরও প্রবল সমর্থক। চলতি মাসে ম্যানহাটনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই সমর্থনের সঙ্গে তার রাজনীতির মূল দিক অহিংস নীতির মিল রয়েছে।
মামদানির প্রচারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আসে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মেহদি হাসানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে। তাকে প্রশ্ন করা হয়, যদি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে আসেন, তিনি কী করবেন।
তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে এলে মেয়র হিসেবে আমি তাকে গ্রেপ্তার করাব। এই শহরে আমাদের মূল্যবোধ আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এবার আমাদের কার্যক্রমও সেই অনুযায়ী হওয়া উচিত।
মামদানি গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা স্লোগান থেকেও নিজেকে আলাদা করেননি, যা অনেক ইহুদি নেতা ও রক্ষণশীল বিশ্লেষকের কাছে প্ররোচনামূলক এবং এন্টি-সেমিটিক মনে হয়েছে। ২০২৫ সালের জুনে এক পডকাস্টে তিনি বলেন, ৯/১১-এর পর বড় হওয়া একজন মুসলিম হিসেবে আমি জানি, কীভাবে আরবি শব্দগুলোকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। তিনি যোগ করেন, এই স্লোগান মূলত বিশ্বজুড়ে শোষিত মানুষের প্রতি সংহতির প্রকাশ, সহিংসতার আহ্বান নয়।
কুয়োমোর প্রচারণায় মামদানির মুসলিম পরিচয় এবং ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থানকে ব্যবহার করে তাকে অ্যান্টি-সেমিটিক বলে সমালোচনা করা হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটি ইসরায়েলের বাইরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইহুদি সম্প্রদায়ের আবাসস্থল।
২০২৫ সালের জুনে এক সাক্ষাৎকারে, ইসলামবিরোধী হুমকির প্রসঙ্গে মামদানি বলেন, এই শহর বা দেশে অ্যান্টি-সেমিটিজমের কোনো স্থান নেই। তিনি বারবার জোর দিয়ে বলেছেন যে তার সমালোচনা কেবল মার্কিন ও ইসরায়েলি সরকারের নীতি সম্পর্কে, এটি ইহুদি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়।
মামদানি ভোটের দিন পর্যন্ত জনমত জরিপে এগিয়ে ছিলেন ৪৬ শতাংশ সমর্থন নিয়ে। কুয়োমোর সমর্থন ছিল ৩২ শতাংশ, আর রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার সমর্থন ছিল ১৬ শতাংশ।
সোমবার, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কুয়োমোর পাশে দাঁড়ান এবং বলেন প্রার্থী স্লিওয়াকে ভোট দেওয়া মানে মামদানিকে ভোট দেওয়া। তবে স্লিওয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজের নাম সরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানান।
নিউইয়র্ক সিটি ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই কারণে মামদানি ভোটের দিন পর্যন্ত শহরের নতুন মেয়র হওয়ার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন। এই শহরে শেষবার কোনো রিপাবলিকান মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০০১ সালে।

