পশ্চিমতীরে অবৈধ বসতিতে লাভবান এয়ারবিএনবিসহ ১৫৮ প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ জাতিসংঘের

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
27 September 2025, 12:28 PM
UPDATED 27 September 2025, 18:38 PM

ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে ইসরায়েলের অবৈধ অভিবাসনের এলাকায় ব্যবসা করে যেসব বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান মুনাফা পায় তাদের তালিকা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এখন এরকম প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৫৮টি। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পুরো পশ্চিমতীর গ্রাসের হুমকির পর বিশ্ব সংস্থা এমন তালিকা প্রকাশ করলো।

গতকাল শুক্রবার সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকাশিত তালিকায় এয়ারবিএনবি, বুকিং ডট কম, এক্সপেডিয়া ও ট্রিপঅ্যাডভাইজরের মতো বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান আছে যারা ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে ইসরায়েলের অবৈধ অভিবাসনে ব্যবসা করে মুনাফা পায়।

এতে বলা হয়, অধিকৃত পশ্চিমতীরে ইসরায়েলের অবৈধ বসতিতে ব্যবসা করা যেসব প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিজে) চোখে অবৈধ জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা সেগুলোর তালিকা প্রকাশ করেছে।

এই তালিকার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলি। এ ছাড়াও, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলোর নিবন্ধন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, ফ্রান্স ও জার্মানিতে। জাতিসংঘ মনে করে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত অবৈধকাজে সহায়তা না করা।

২০২৩ সালের জুনে সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকায় ৯০টি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে সাত প্রতিষ্ঠানের নাম সরিয়ে ফেলা হয়। এর মধ্যে আছে যুক্তরাজ্যে নিবন্ধিত অনলাইন ট্রাভেল কোম্পানি অপোডো ও স্পেনের অনলাইন ট্রাভেল অ্যাজেন্ট ই-ড্রিমস।

জাতিসংঘের হিসাবে এখন সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৫৮টি।

এসবের মধ্যে আছে নির্মাণ, আবাসন, খনি ও পাথর ভাঙা শিল্পে জড়িত প্রতিষ্ঠান, যারা ইসরায়েলের অবৈধ অভিবাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এগুলোর পাশাপাশি আরও ৩০০ প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের পৃথক এক সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করা, ইহুদিদের অবৈধ বসতির সংখ্যা বাড়ানো ও পশ্চিমতীর পুরোপুরি গ্রাস করার দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা উঠে এসেছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি পশ্চিমতীরে যে জাতিগত হিংসা ও নিধন চলছে তার পটভূমিতে জাতিসংঘের এই তালিকা প্রকাশিত হলো।

ইসরায়েলি সরকার পশ্চিমতীরে অবৈধভাবে বসতি করা সশস্ত্র ইহুদিদেরকে সহায়তা দিয়ে ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করছে বলে সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে প্রতিনিয়ত জানানো হচ্ছে। সেখানে সশস্ত্র ইহুদিরা ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ও কৃষিজমি দখল করে নিচ্ছে। ফিলিস্তিনের বাস্তুচ্যুত করতে তারা জাতিগত নিধন চালিয়ে যাচ্ছে।

মানবাধিকার কর্মীদের আশা—এই তালিকা ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলে ব্যবসা করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে সহায়তা করছে তা এই তালিকার মাধ্যমে বিশ্ববাসী জানতে পারবে।

অনেকের মতে, জাতিসংঘের এই নতুন তালিকা সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বহু দশক ধরে চলা দখলদারিত্ব অবসানে বিশ্ববাসীকে আরও সোচ্চার হতে হবে।

ইসরায়েলের পাশে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করতে ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিমতীরে অবৈধ বসতি বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে বহুধা বিভক্ত করে স্বাধীন রাষ্ট্রের ধারণা বিলুপ্ত করে দিতে চায়। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ এই তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে অধিকৃত অঞ্চলে ব্যবসা করতে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও যেন সতর্ক করে দিলো।