ট্রাম্প প্রশাসনের হুমকিতে বন্ধ হলো ‘জিমি কিমেল শো’

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
18 September 2025, 06:04 AM

যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় উপস্থাপক জিমি কিমেল-এর লেট নাইট টক শো বাতিল হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

রক্ষণশীল ইনফ্লুয়েন্সার চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে জিমি কিমেল তার অনুষ্ঠানে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করেন। সেই মন্তব্যের জেরে ট্রাম্প প্রশাসন এবিসি টিভি নেটওয়ার্কের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেয়।

ওই প্রেক্ষাপটে তড়িঘড়ি করে নেটওয়ার্কটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী 'লেট নাইট শো'র অন্যতম, জিমি কিমেল শো বাতিলের ঘোষণা দেয়।

লেট নাইট শো বা 'শেষ রাতের' অনুষ্ঠানগুলো সাধারণত রাত ১১টার পর টিভিতে প্রচারিত হয়। এসব অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে থাকেন সুপরিচিত কোনো উপস্থাপক। জিমি কিমেলও সেরকমই একজন। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বিশ্বজুড়ে তার লেট নাইট শোর লাখো দর্শক-ভক্ত রয়েছে।

এবিসি নিউজের এই সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সমালোচকরা। তাদের মতে, এই ঘটনা সরকারি 'সেন্সরশিপ'-এর উদাহরণ।

আমেরিকার জন্য সুসংবাদ

তবে এবিসির সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

তিনি জিমি কিমেল শো বন্ধের খবরে সন্তোষ প্রকাশ করে ট্রুথ সোশালে পোস্ট করেন। তিনি বলেন, 'আমেরিকার জন্য এটা বড় সুসংবাদ।'

'এবিসিকে অভিনন্দন। যে কাজটা করা দরকার ছিল, সেটা করার মতো সাহস তারা অবশেষে অর্জন করতে পেরেছে', যোগ করেন তিনি।

এর আগে জুলাই মাসে স্টিফেন কোলবার্ট নামের অপর সঞ্চালকের লেট নাইট শো বাতিলের সিদ্ধান্তেও উল্লাস করেন ট্রাম্প। সে সময় তিনি একই ধারার অপর দুই সঞ্চালকের অনুষ্ঠানও বাতিলের আহ্বান জানান।

'এখন তাহলে জিমি (ফ্যালন) আর সেথ (মেয়ার্স) বাকি থাকল। তারা দুইজনই লুজার, দুইজনই এনবিসি নেটওয়ার্কে। ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করে। তাদের অনুষ্ঠানের রেটিংও ভয়াবহ। কাজটা করে ফেলো, এনবিসি!', বলেন তিনি।

চার্লি কার্কের হত্যাকারীও 'ট্রাম্পভক্ত'

এক সপ্তাহ আগে ইউটাহ ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে বন্দুক হামলায় নিহত হন ট্রাম্পের মিত্র চার্লি কার্ক।

ট্রাম্প ও রক্ষণশীলরা ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য 'উগ্র বামপন্থিদের' দায় দিয়েছে।

চলতি সপ্তাহে হত্যাকারী টাইলার রবিনসনকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের মতে, তিনিই এককভাবে এই অপরাধের জন্য দায়ী এবং সে অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে।

Charlie Kirk Shooting
চার্লি কার্ক। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সোমবার কিমেল তার অনুষ্ঠানের শুরুতে চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'মাগা (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) চক্র মরিয়া হয়ে একটা বিষয় প্রমাণ করতে চাইছে, আর সেটা হলো, চার্লি কার্ককে যে তরুণ হত্যা করেছে, সে তাদের কেউ নয়। এটা তারা করছে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার উদ্দেশে।'

উল্লেখ্য, মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (আমেরিকাকে আবারও মহা রাষ্ট্রে পরিণত কর) ট্রাম্পের নির্বাচনী স্লোগান। এই বার্তা ট্রাম্পভক্তদের সংঘবদ্ধ করে এবং অনেক সময়ই ভিন্নমতাবলম্বী মানুষরা ট্রাম্পের ভক্তও ভোটারদের মাগা বলে অভিহিত করে থাকেন।

এ কথা বলার পর কিমেল ট্রাম্পের একটি ভিডিও ফুটেজ দেখান। সেখানে দেখা যায়, কার্কের মৃত্যুতে কতটা প্রভাবিত হয়েছেন, এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রায় পর মুহূর্তেই ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে নতুন বলরুম নির্মাণ নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেন।

কিমেল ওই ফুটেজ দেখানোর পর দর্শকরা হাসিতে ফেটে পড়েন।

কিমেল মন্তব্য করেন, 'একজন মানুষ, যাকে আপনি বন্ধু বলে ডাকেন—তার মৃত্যুতে এভাবে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ শোক প্রকাশ করে না। এভাবে একটি চার বছর বয়সী শিশু তার গোল্ডফিশের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে।'

এফসিসির হুমকিতে বাতিল হলো অনুষ্ঠান

গতকাল বুধবার ট্রাম্প প্রশাসনের কেন্দ্রীয় যোগাযোগ কমিশনের (এফসিসি) চেয়ারম্যান ব্রেন্ডান কার প্রকাশ্যে এবিসি নেটওয়ার্কের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেন। ওই নেটওয়ার্কেই কিমেলের শো সম্প্রচারিত হয়।

তিনি ডানপন্থি পডকাস্টার বেনি জনসনকে জানান, এনবিসি ও অন্যান্য নেটওয়ার্কগুলো যদি নিজেরা এ ধরনের ঘটনার সুরাহা না করে, তাহলে এফসিসির পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, 'আমরা এটা সহজভাবে বা কঠিন করেও করতে পারে। আমরা আশা করি, ওই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যধারা বদলানোর উপায় খুঁজে পাবে এবং কিমেল ও এ ধরনের অন্যান্য অনুষ্ঠানের বিষয়ে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে। সত্য বলতে গেলে, এটা না করা হলে এফসিসির জন্য আগামীতে বাড়তি কাজের বোঝা আসছে।'

fcc.jpg
এফসিসির চেয়ারম্যান ব্রেন্ডান কার। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ওই পডকাস্ট সম্প্রচারের কয়েক ঘণ্টা পর এবিসি'র সহযোগী স্টেশনগুলোর অন্যতম সত্ত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান নেক্সস্টার ঘোষণা দেয়, তারা তাদের স্টেশনগুলো থেকে কিমেলের শো সরিয়ে নেবে।

এরপর ডিজনির মালিকানাধীন এবিসিও একই উদ্যোগ নেয়। তারা জিমি কিমেলের অনুষ্ঠান বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়।

এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জিমি কিমেল কোনো মন্তব্য করেননি। তার প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেও এএফপি কোনো সাড়া পায়নি।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নিন্দা

ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে।

এক্সে পোস্ট করে মার্কিন সিনেটর বেন রে লুজান বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও এফসিসির চেয়ারম্যান বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন: কথামতো চল অথবা চুপ হয়ে যাও।'

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম বলেন, 'গণমাধ্যমের প্ল্যাটফর্ম কিনে নেওয়া ও নিয়ন্ত্রণ করা। ধারাভাষ্যকারদের বরখাস্ত করা। অনুষ্ঠান বাতিল করা। এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সবকিছুই সমন্বিত। এবং এটা বিপজ্জনক।'

'তারা আপনার জীবনেও সেন্সরশিপ আরোপ করছে', যোগ করেন তিনি।