গুলশানে স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা ক্যাম্প
বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হওয়া ও অন্যতম প্রাণঘাতী ক্যানসার হিসেবে চিহ্নিত স্তন ক্যানসার নিয়ে রাজধানীর গুলশানে দুই দিনের এক সচেতনতা ক্যাম্প শুরু হয়েছে।
অক্টোবর মাসকে বিশ্বজুড়ে 'স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস' হিসেবে পালন করা হয়। এই ধারাবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশান-২ এর ডিসিসি মার্কেট চত্বরে এই ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
ক্যাম্পের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে 'আমি বিজয়িনী, কন্যা-জায়া-জননী—আমার হাতেই ব্রেস্ট ক্যানসারের পরাজয়'।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে 'মানবতার কল্যাণে' আয়োজিত এমন উদ্যোগকে 'সময়োপযোগী ও প্রশংসার দাবিদার' হিসেবে অভিহিত করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।
সভাপতির বক্তব্যে এই উদ্যোগের সহযোগী এবং ঢাকা-১৭ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ডা. এসএম খালিদুজ্জামান তার দল ক্ষমতায় গেলে স্বাস্থ্য খাতের সকল ধরনের দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে স্বাস্থ্যসেবাকে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০ লাখ নতুন স্তন ক্যানসার রোগী শনাক্ত হয়। উন্নত দেশগুলোতে নিয়মিত স্ক্রিনিং, উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা ও জনসচেতনতার কারণে তুলনামূলকভাবে বেঁচে থাকার হার বেশি। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ, যেমন বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হওয়ার হার কম। এ কারণে মৃত্যুর হারও বেশি।
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর ১৩ থেকে ১৫ হাজার নারীর স্তন ক্যানসার শনাক্ত হয়। বাংলাদেশে নারী ক্যানসার রোগীর প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের বেশি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত।
ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের পক্ষ থেকে এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নুরুন্নিসা সিদ্দিকা। তিনি বাংলাদেশের নারীদের স্তন ক্যানসার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন। বলেন, 'স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে প্রতি মাসে একবার নিজ উদ্যোগে স্তন পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো অনেক নারী লজ্জা ও অজ্ঞতার কারণে চিকিৎসা নিতে দেরি করেন।'
এই সমস্যা দূর করতে জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগ একটি অ্যানিমেটেড ভিডিও প্রকাশ করেছে বলে জানান নুরুন্নিসা সিদ্দিকা; যাতে নারীরা ঘরে বসেই স্তন পরীক্ষার পদ্ধতি শিখতে পারেন। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগকে জাতীয় নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবা চৌধুরী সুইট। তিনি জানান, এই ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী নারীরা চিকিৎসকদের কাছ থেকে সরাসরি 'সেল্ফ ব্রেস্ট টেস্ট' পদ্ধতি শিখতে পারবেন।
ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী নারীদের জন্য বিনামূল্যে কাউন্সেলিং সেবার পাশাপাশি কিউআর কোড সম্বলিত একটি উইশ কার্ড সরবরাহ করা হয়; যেটি স্ক্যান করার মাধ্যমে সেল্ফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশনের প্রক্রিয়াগুলো অ্যানিমেটেড ভিডিওর মাধ্যমে দেখা সম্ভব। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী নারীদের প্রিয়জনদের জন্য দেওয়া হয় উইশ কার্ড।
ক্যাম্পে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সামিয়া মুবিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. নাইমা মোয়াযযেম, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুরুন্নাহার খানম মিশু ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের সাবিকুন্নাহার মুন্নী।