স্বাভাবিকতা ফিরছে পর্যটনে, হোটেল-রিসোর্ট ৬০ শতাংশ পূর্ণ
ডিসেম্বরে দেশের প্রধান পর্যটন এলাকাগুলোর হোটেল ও রিসোর্টের ৬০ থেকে ৮০ ভাগ কক্ষই পর্যটকে পূর্ণ। এতে বোঝাই যাচ্ছে যে এই মৌসুমে পর্যটকের সংখ্যাও ভালো এবং হোটেল ব্যবসায়ীদেরও ব্যবসা ভালো চলছে।
ব্যবসায়ী মালিকেরা জানান, গত ডিসেম্বরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটনে বেশ ভাটা পড়েছিল। কিন্তু এ বছর পর্যটকের সংখ্যা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরতে শুরু করেছে।
দেশে পর্যটনের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পর্যটন দেশের জিডিপিতে ৩ শতাংশ এবং মোট কর্মসংস্থানে ৮ শতাংশ অবদান রেখেছে।
কক্সবাজারের সি পার্ল বিচ রিসোর্টের সেলস ও মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক আব্দুল আওয়াল জানান, তার রিসোর্টে এখন ব্যবসা ভালো হচ্ছে। প্রায় ৬০ শতাংশ কক্ষে পর্যটক রয়েছেন। ২০২৩ সালেও এমন ছিল।
'রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ২০২৪ সালে ব্যতিক্রম ছিল। রিসোর্টের কার্যক্রম আবার স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে এসেছে,' বলেন তিনি।
আউয়াল আরও বলেন,অধিকাংশ পর্যটক দুই দিন থাকেন, কারণ কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতের বাইরে খুব বেশি আকর্ষণ নেই। 'করপোরেট গ্রুপের বুকিং, কনভেনশন ইত্যাদি আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যবসায়িক ক্ষেত্র,' বলেন তিনি।
কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্টের অপারেশন ম্যানেজার রানা কর্মকার বলেন, সামনে নির্বাচন সত্ত্বেও এই ডিসেম্বরে ব্যবসা ভালো হচ্ছে।
'গত বছরের তুলনায় রিজার্ভেশন ভালো। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ২০২৪ একটি অপ্রত্যাশিত বছর ছিল। ২০২৩ সালের তুলনায়, হোটেল ও রিসোর্টে রিজার্ভেশনও ভালো এবং মোটামুটি একই ধরনের।'
কর্মকার আরও বলেন, ডিসেম্বরে রিসোর্টের ৮০ শতাংশ পর্যটকে ভরা। এই চিত্র ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মতোই, যা সাধারণত সন্তোষজনক।
তবে তিনি বলেন, বাইরের রেস্তোরাঁর অতিথিদের, বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকদের, সংখ্যা কমেছে। আগে যারা রিসোর্টে থাকতেন না, তারা অন্তত একবার রেস্তোরাঁয় খেতেন, কিন্তু এখন তা হয় না।
নিরাপত্তা সমস্যা এবং সড়কের বাজে পরিস্থতির কারণে পর্যটক কম এসেছে, তাই রেস্তোরাঁয় অতিথি কমেছে বলে মনে করেন তিনি।
হবিগঞ্জের বাহুবলে অবস্থিত দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টের সিনিয়র সুপারভাইজার এমডি বাহার খান বলেন, এই ডিসেম্বরে গড়ে ৬০ ভাগ কক্ষে পর্যটক আছেন, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় কিছুটা কম।
তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ঢাকা–সিলেট রুটে সংস্কার কাজের কারণে এই বছর পর্যটকরা কম আসছেন এবং যাত্রাও সময় বেশি লাগছে।' তবুও পর্যটনের এই মৌসুমে ব্যবসা মোটামুটি ঠিকঠাকই চলছে, বলেন তিনি।
দেশে রিসোর্ট ও অন্যান্য পর্যটন ব্যবসা পরিচালনা করা ট্যুর গ্রুপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরানুল আলম বলেন, ব্যবসা মোটামুটি ভালো চলছে, তবে লাভ ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশে কমে গেছে।
তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের চাহিদা থাকলেও জাহাজের টিকিটের ঘাটতি এবং দীর্ঘ, অস্বস্তিকর যাত্রার কারণে পর্যটকরা অনেকটাই হতাশ হন।
আলম আরও বলেন, আগে যারা প্রতি বছর ভ্রমণ করতেন, তারা এখন আর আসছেন না এবং সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার কারণে তারা তাদের বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদেরও ভ্রমণে উৎসাহিত করছেন না।
তিনি আরও বলেন, সেন্ট মার্টিনে যাত্রা এখন সমুদ্রপথে ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় নিচ্ছে। এ ছাড়া বোর্ডিং এবং জাহাজ থেকে নামতে বেশি সময় লাগছে এবং জেটিতে তীব্র ভিড় রয়েছে। এসব সমস্যা পর্যটক সংখ্যা কমিয়েছে এবং তাদের ভ্রমণের পরিকল্পনাকে সংক্ষিপ্ত করছে।
তিনি যোগ করেন, 'পর্যটকেরা এখন খরচ বেশি হলেও আরামদায়ক বা ভালো রিসোর্টে যেতে পছন্দ করছেন।'
সাজেকের কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণা দেব বর্মন বলেন, 'ডিসেম্বরে সাজেকের রিসোর্টের প্রায় ৭০ শতাংশ কক্ষে পর্যটক আছেন।'
বর্মন বলেন, 'সাজেক এখন ফাঁকা থাকে না। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে পর্যটক আসছেন। শুক্রবার ও শনিবার সবচেয়ে ব্যস্ত সময় কাটে। তবে পুরো সপ্তাহ জুড়েই পর্যটকদের চলাচল থাকে। ডিসেম্বর ২৬ ও ২৭ তারিখের দিকে সব রিসোর্ট সম্পূর্ণভাবে বুক হয়ে যায়।'
তিনি আরও বলেন, 'এখানকার পর্যটন মৌসুম আগস্টে শুরু হয় এবং ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে, আর এই সময়ে ব্যস্ততা সবচেয়ে বেশি থাকে।'
বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. রফিউজ্জামান বলেন, 'এই ডিসেম্বরে পরিস্থিতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ভালো, বুকিং প্রায় স্বাভাবিক মৌসুমের মতো।'
তিনি আরও বলেন, 'যদিও আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে পর্যটন কমেছে, নতুন সরকার আসার পর ২০২৬ সালে এই খাতে আরও উন্নতির আশা রয়েছে।'