ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মাধ্যমে ‘বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেওয়ার’ দাবি উত্তর কোরিয়ার

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
9 February 2022, 14:01 PM
UPDATED 9 February 2022, 20:18 PM

উত্তর কোরিয়া গতকাল মঙ্গলবার বলেছে, বিশ্বের হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র ও অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র আছে, উত্তর কোরিয়া সেগুলোর মধ্যে একটি।  

তারাই একমাত্র দেশ যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং সারা বিশ্বকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মাধ্যমে 'কাঁপিয়ে দিচ্ছে'।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি বেশ কয়েকবার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে উত্তর কোরিয়া। বিশেষ করে গত জানুয়ারিতে এই ধরনের পরীক্ষার রেকর্ড তৈরি হয়। ওই মাসে অন্তত ৭টি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া।

এ ছাড়া, ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মত হায়োসাং-১২ নামের মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় দেশটি। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি উত্তর কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে সক্ষম।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন বছরের শুরু থেকে বেশ কিছু পরীক্ষা দেশটির 'অসামান্য অর্জনের' কথা প্রকাশ করেছে, যা উত্তর কোরিয়ার 'যুদ্ধ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে' শক্তিশালী করেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, হায়োসাং-১৫ নামের দূর পাল্লার আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। প্রথমবার ২০১৭ সালে পরীক্ষার পর এটির আর কোনো পরীক্ষা চালানো হয়নি। ধারণা করা হয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো জায়গায় আঘাত হানতে সক্ষম।

এতে আরও বলা হয়, 'আজকের দুনিয়ায় অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মাথা নত করছে এবং তাদের প্রতি অন্ধ আনুগত্য দেখিয়ে সময় নষ্ট করছে। এই গ্রহে শুধু একটি দেশই আছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডকে আঘাত হানতে সক্ষম—এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করে তামাম দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দিতে পারে।'

'বিশ্বে ২০০টিরও বেশি দেশ আছে, কিন্তু শুধু অল্প কয়েকটি দেশের কাছেই হাইড্রোজেন বোমা, আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র আছে', বিবৃতিতে বলা হয়।

kim_jong_unr.jpg
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে, উত্তর কোরিয়ার প্রতি তাদের কোনো শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব নেই এবং তারা তাদের সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসার ওপর জোর দিচ্ছে। কিন্তু ওয়াশিংটনের আলোচনার আহ্বান পিয়ংইয়ং থেকে ধারাবাহিকভাবে অবজ্ঞা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, 'উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ। পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধের ক্ষেত্রেও তারা বাধা সৃষ্টি করছে।'

মুখপাত্র আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে নিবৃত্ত করার বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। উত্তর কোরিয়ার যে কোনো ধরনের উস্কানি ও আক্রমণাত্মক মানসিকতা মোকাবিলা, তাদের সবচেয়ে ভয়াবহ অস্ত্র প্রকল্পের আওতা কমানো এবং সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ, বিভিন্ন দেশে মোতায়েন করা সেনা ও মিত্রদের নিরাপদ রাখা গুরুত্বপূর্ণ।'

উত্তর কোরিয়া মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছে। এই জাতীয় ছুটির দিনে আগে মাঝে মাঝে ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য অস্ত্রসহ বড় সামরিক কুচকাওয়াজ দেখা যেত। তবে এ বছর কোনো কুচকাওয়াজের সংবাদ পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ৩০ জানুয়ারি হায়োসাং-১২ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর উত্তর কোরিয়া আইসিবিএম বা পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা আবারও শুরু করতে পারে। ২০১৭ সালের পর উত্তর কোরিয়া কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা বা আইসিবিএম নিক্ষেপ করেনি বা করার পরিকল্পনাও করেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াশিংটনভিত্তিক একজন বিশ্লেষক সোমবার জানান, তারা উত্তর কোরিয়ার চীন সীমান্তের কাছাকাছি জায়গায় একটি সামরিক ঘাঁটির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন, যেখানে খুব সম্ভবত আইসিবিএম স্থাপন করা হবে।

২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কমানো বা কিছুটা প্রত্যাহারের বিনিময়ে দেশটির অস্ত্রাগার সীমিত রাখার বিষয়ে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হয়। এরপর থেকে আলোচনা অচলাবস্থায় আছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরাসরি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বসতে রাজি নন। তিনি চান আগে আরও 'নিম্ন' পর্যায় থেকে আবারও আলোচনা শুরু হোক।