নিজেদের সাজানো ছকেই ঘায়েল ভারত? বাভুমা বললেন, ‘সম্ভবত তাই’
মাত্র তিন দিনের মধ্যে লো স্কোরিং কলকাতা টেস্টে ৩০ রানের স্মরণীয় জয় তুলে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই ম্যাচের সিরিজে তারা এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে। এমন জয়ের ধরন তাদের শক্তি ও সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশকারীদের চুপ করিয়ে দেওয়ার পথে একটি বড় পদক্ষেপ। টেস্টের বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেও তাদের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা লোকের সংখ্যা তো কম নয়!
বড় প্রত্যাশা নিয়ে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে গিয়ে চাপের মুখে ভেঙে পড়ার জন্য পরিচিতি আছে আছে প্রোটিয়াদের। সেকারণে তাদের গায়ের সঙ্গে লেগে আছে 'চোকার' তকমা, যা নিশ্চিতভাবেই তারা চায় না। তবে গত জুনে ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে দলটি গড়ে ইতিহাস। আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে উঁচিয়ে ধরে পরম আকাঙ্ক্ষিত ট্রফি।
দক্ষিণ আফ্রিকা এবার ভারতে খেলতে গেছে এটা প্রমাণ করতে যে, টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া সৌভাগ্যক্রমে ঘটেনি। বরং যোগ্য দল হিসেবেই সেরার মুকুট শোভা পাচ্ছে তাদের মাথায়। সেই লক্ষ্য পূরণে টেম্বা বাভুমাদের শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। গতকাল ইডেন গার্ডেন্সে ৩০ রানের রোমাঞ্চকর জয়ের স্বাদ পেয়েছে তারা।
ভারত তাদের সাজানো ছকেই দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ঘায়েল হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে সংবাদ সম্মেলনে বাভুমা বলেন, 'হ্যাঁ, সম্ভবত তাই। আমরা এখানে এটা জেনেই এসেছি যে উইকেট স্পিনারদের জন্য সহায়ক হবে, ঠিক যেমনটা এই ম্যাচে ছিল। তাই আমাদের কাছে এটা কোনো বিস্ময় ছিল না।'
টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের মাটিতে ১৫ বছর পর এটি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম জয়। শেষবার তারা জিতেছিল ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। নাগপুরে ভারত হেরেছিল ইনিংস ও ৬ রানের ব্যবধানে।
ব্যাটারদের জন্য উইকেট ছিল ভীষণ কঠিন। ভারতের চাহিদামাফিক তৈরি করা পিচে তীক্ষ্ণ টার্নের পাশাপাশি অসমান বাউন্সের দেখা মিলছিল। দুই দলের চার ইনিংসের কোনোটিই স্পর্শ করতে পারেনি দুইশ। এমন বধ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমা। পুরো ম্যাচের একমাত্র ফিফটি আসে তার ব্যাট থেকে। তার কল্যাণে পাওয়া পুঁজি পরে জয়ের জন্য হয় যথেষ্ট। ১২৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দ্বিতীয় ইনিংসে স্রেফ ৯৩ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা।
ঘাড়ের সমস্যায় ভারতের অধিনায়ক শুবমান মাঝপথে ছিটকে গেলেও শেষদিকে তাদের আশা দিচ্ছিলেন অক্ষর প্যাটেল। তার উইকেট নিয়ে বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজ স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৪০ হাজার দর্শককে রীতিমতো স্তব্ধ করে দেন। সেখানেও বড় অবদান ছিল বাভুমার। মিডউইকেট থেকে লং-অনের দিকে উল্টো দৌড়ে দারুণ ক্যাচ নেন তিনি।
স্পিনবান্ধব পিচে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন অফ স্পিনার সাইমন হার্মার। তবে একপ্রান্ত আগলে অপরাজিত ৫৫ রানের ইনিংস খেলা বাভুমাই মূলত দক্ষিণ আফ্রিকাকে লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনেন। ফলে হাতে থাকা ৩ উইকেট নিয়ে তৃতীয় দিনে আরও ৬০ রান যোগ করতে পারে দলটি। এরপর বোলারদের তিনি ব্যবহার করেন দক্ষতার সঙ্গে।
অল্প পুঁজি হলেও বাভুমা বলেন কখনোই সতীর্থ বোলারদের ওপর বিশ্বাস হারাননি, 'প্রতিদিন এমন হবে না যে, ১২৫ রানকে আপনার কাছে জয়ের জন্য পর্যাপ্ত স্কোর মনে হবে। কিন্তু আমাদের নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতেই হতো। আমরা জানতাম এই পিচে এই রান তাড়া করা কঠিন হবে। নিজেরা ব্যাটিংয়ের সময়ই আমরা তা দেখেছি।'
