ঝুলে পড়েছে ট্রাম্পের স্বপ্নের প্রতিরক্ষা প্রকল্প ‘গোল্ডেন ডোম’

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
21 November 2025, 13:04 PM

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গোল্ডেন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রকল্পটি বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ৪৩ দিনের শাটডাউন ও চলতি গ্রীষ্মে বরাদ্দ হওয়া প্রথম ২৫ বিলিয়ন ডলার কীভাবে ব্যয় হবে—এ বিষয়ে স্পষ্ট পরিকল্পনার অভাবই এই দেরির পেছনের কারণ মনে করা হচ্ছে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অন্তত আটজন ব্যক্তি।

আগে প্রকল্পটির নাম ছিল আয়রন ডোম। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু করেন 'গোল্ডেন ডোম' প্রকল্পটি। এ উদ্যোগের লক্ষ্য একটি সমন্বিত আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা। গোল্ডেন ডোমের উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন সক্ষমতাকে একত্রিত করে একটি 'সিস্টেম অব সিস্টেমস' তৈরি করা, যা 'যেকোনো শত্রুর আকাশপথের আক্রমণ' থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সুরক্ষা দেবে।

গোল্ডেন ডোম প্রকল্পের বেশিরভাগ বিষয়ই গোপন শ্রেণিভুক্ত বা ক্লাসিফায়েড। এ জন্য এই প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ইন্ডাস্ট্রির তিনজন ব্যক্তি ও এক মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শাটডাউনের কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে। সেই সঙ্গে দৈনন্দিন চুক্তি অনুমোদন ও স্বাক্ষরের মতো নিয়মিত কজের দায়িত্বে থাকা গুরুত্বপূর্ণ জনবল দায়িত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য হন।

গোল্ডেন ডোম এর জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার কোন খাতে কীভাবে ব্যয় হবে— সে পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ তথ্য রয়টার্সকে জানিয়েছেন মার্কিন প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা, ক্যাপিটল হিলের একজন সূত্র এবং দুইজন শিল্প নির্বাহী। তারা নাম প্রকাশে রাজি হননি।

এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ১৭৫ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প ২০২৮ সালের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডকে ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা দিতে প্রস্তুত হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, 'আমি মনে করি না তারা খুব বেশি অগ্রগতি করেছে। তবে সবকিছু যে ভয়াবহ অবস্থায় সেটিও আমার মনে হয় না।'

রয়টার্স প্রশাসন, পেন্টাগন, কংগ্রেস এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের এক ডজনের বেশি সূত্রের সঙ্গে কথা বলে গোল্ডেন ডোম নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতির একটি চিত্র তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।

গোল্ডেন ডোমের জন্য বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা কংগ্রেসে দেওয়ার কথা ছিল আগস্টের শেষ দিকে। ক্যাপিটল হিলের দুই সূত্র জানিয়েছেন, এখন সেই পরিকল্পনা ডিসেম্বর মাসে জমা দেবেন ডেপুটি সেক্রেটারি অব ডিফেন্স স্টিভ ফেইনবার্গ।

প্রতিরক্ষা চুক্তিতে দেরি হওয়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু ট্রাম্প যে স্বল্প সময়সীমা বেধে দিয়েছেন, তার কারণে বিষয়টি গোল্ডেন ডোম এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প চান, তারা মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই এ প্রকল্প পুরোদমে কার্যকর হোক।

প্রকল্পটির গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিগুলো পেন্টাগনের অভ্যন্তরীণ সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হওয়ার কথা ছিল। যা এখন এ সময়ের মধ্যে না-ও হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চারজন প্রতিরক্ষা শিল্প নির্বাহী।

অবশ্য হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র বলেন, 'গোল্ডেন ডোম একটি দূরদর্শী প্রকল্প, যা একজন দূরদর্শী প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে চলছে। এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে কঠোর পরিশ্রম লাগবে, এতে কারও অবাক হওয়া উচিত নয়।'

পেন্টাগনের এক মুখপাত্র বলেন, 'শত্রুরা যেন গোল্ডেন ডোম প্রযুক্তির সুযোগ নিতে না পারে— সে জন্য আমরা প্রকল্পের অগ্রগতি কঠোরভাবে গোপন রাখছি।'

এ বিষয়ে ফেইনবার্গ ও গোল্ডেন ডোমের প্রকল্প ব্যবস্থাপক জেনারেল মাইকেল গুয়েটলেইন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জেনারেল মাইকেল মধ্য–নভেম্বরের ডেডলাইন মেনে সিস্টেম বাস্তবায়নের একটি পরিকল্পনা জমা দিয়েছিলেন গত সেপ্টেম্বরে। এ পরিকল্পনা অনুসারেই স্যাটেলাইট, ইন্টারসেপ্টর, গ্রাউন্ড স্টেশন ও নেটওয়ার্ক অবকাঠামো তৈরির চুক্তি হওয়ার কথা। তবে বিষয়টি নিয়ে এখন ভিন্নধর্মী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে।

পেন্টাগন বলছে, পরিকল্পনাটি পর্যালোচনায় রয়েছে। তবে প্রশাসনের ভেতরের সূত্রগুলো বলছে— প্রস্তাবিত ওই কাঠামো এখনো পরিবর্তনশীল এবং আরও কয়েক সপ্তাহেও চূড়ান্ত হবে না।

চূড়ান্ত কাঠামো, বাস্তবায়ন পরিকল্পনা বা অনুমোদিত ব্যয় পরিকল্পনা ছাড়া কোনো প্রোগ্রামকে চুক্তির জন্য উন্মুক্ত করতে পারছেন না জেনারেল মাইকেল। ফলে পুরো প্রকল্পটি পরিকল্পনা পর্যায় থেকে বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে না।

আর এই দেরির কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে— গোল্ডেন ডোম এর জন্য আরও বড় বাজেট এবং বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে।