নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই শান্তি দরকার: জেরুজালেম পোস্ট

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
10 July 2025, 09:02 AM
UPDATED 10 July 2025, 15:23 PM

নিজ দেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই ইসরায়েলকে যুদ্ধ ছেড়ে শান্তির পথে আসতে হবে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট'র সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়।

গাজা-যুদ্ধকে মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় 'মূল বাধা' হিসেবে উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, এই সংঘাতের অবসান না হলে আরব বিশ্বের বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলোর সমর্থন হারাবে ইসরায়েল।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে জানানো হয়, সৌদি সাংবাদিক-গবেষক আব্দুলআজিজ আলখামিস সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা ও গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন প্রকাশ্য ও গোপন আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।

ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে 'বিরল' সম্মেলনে তিনি জানান, গাজায় যুদ্ধ এমনভাবে শেষ হতে হবে যাতে ইরান-তুরস্কসহ সমগ্র অঞ্চলের জন্য পূর্ণাঙ্গ সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়।

'ইরানের আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি যুদ্ধ ভালোবাসেন এবং তিনি চান তা অব্যাহত থাকুক।'

তার মতে, ইরানের সাধারণ মানুষ 'যুদ্ধে নিদারুণ দুর্ভোগের শিকার হলেও' তাদের নেতারা এ ধরনের 'গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির' ফায়দা নিতে চান।

আলখামিস মনে করেন, ইরানকে পাশ কাটিয়ে ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য বাস্তববাদী দেশগুলোর মধ্যে জোট গড়াই এই সমস্যার সুস্পষ্ট সমাধান।

তিনি বলেন, আমেরিকান আর সৌদিদের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন: ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান।

নজিরবিহীন সুবিধাজনক অবস্থায় ইসরায়েল

SEs9hSKBcznexJJu8r7_1pYn0uqdH0imVpzD7SClj74.jpg
(বাম থেকে ডানে) ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও আইডিএফের চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামিরকে অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সামরিক অভিযানের দেখভাল করতে দেখা যাচ্ছে। ছবি: ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

সম্পাদকীয়তে দাবি করা হয়, যেকোনো আঞ্চলিক শান্তি আলোচনার টেবিলে ইসরায়েল এখন সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে, যা নজিরবিহীন।

ইরানের বিরুদ্ধে দুই দফায় সফল সামরিক অভিযান চালিয়ে ইসরায়েল এ অঞ্চলে সামরিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, দীর্ঘমেয়াদে বহিঃশত্রুকে নিরুৎসাহিত করা ও সার্বিকভাবে কৌশলগত সুবিধা আদায়ের লক্ষ্য পূরণ করেছে বলে মত দেন আলখামিস।

আলখামিস দাবি করেন, ইসরায়েলের বর্তমান প্রজন্মের জন্য এটাই এ অঞ্চলে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার শেষ সুযোগ।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল যদি এই সুযোগের সদ্ব্যবহার না করে, তাহলে 'তারা শুধু সৌদি আরবকে হারাবে না; বরং আরব বিশ্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিরল সুযোগও হারাবে।'

আঞ্চলিক শান্তি চুক্তি সই ও আব্রাহাম চুক্তির সম্প্রসারণের উদ্যোগ

rshiid_talukder-6.jpg
ইসরায়েলি উপকূলীয় শহর নেতানিয়ায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। ছবি: এএফপি

নেসেটের ওই অনুষ্ঠানে আঞ্চলিক নিরাপত্তা চুক্তি সইয়ের লক্ষ্যে বহুদলীয় কমিটি বা ককাস গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি, এতে আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার 'আব্রাহাম চুক্তি'র সম্প্রসারণের বিষয়েও ঘোষণা দেওয়া হয়।

এই নিরাপত্তা চুক্তি পরিকল্পনার মূল সূর মধ্যমপন্থি আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জোট গঠন। এই জোট ইরান ও ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। এই পরিকল্পনার নেপথ্যে যারা আছেন, তাদের মতে এই চুক্তির হাত ধরে ইসরায়েল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থেকে বের হয়ে এসে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের বাস্তবতায় ফিরে আসতে পারবে।

আঞ্চলিক শান্তি চুক্তি কমিটির অন্যতম সদস্য আইডিএফ'র সাবেক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উদি দেকাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'এমন সুযোগ বারবার আসে না। আসলেও, তা দ্রুত হাতছাড়া হয়ে যায়।'

তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'দ্রুত উদ্যোগ না নিলে জোট গঠনের এই বিরল সুযোগ হারাতে পারে ইসরায়েল। এটি এ অঞ্চলের উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোকে দমন করতে পারে।'

জোট গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল উপদেষ্টা লিয়ান পোলাক ডেভিড বলেন, 'শুধু সামরিক শক্তিই যথেষ্ট নয়। আমাদেরকে কূটনীতিক শক্তিমত্তাও বাড়াতে হবে।'

সম্মেলনে উপস্থিত অন্যান্য নেতারাও কূটনীতির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দেন।

কমিটিতে সরকারি জোট ও প্রধান বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতা যোগ দেন।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়—দীর্ঘদিন পর ইসরায়েলে এ ধরনের কূটনীতিক উদ্যোগে 'দ্বিদলীয়' বা সরকারি-বিরোধী দলের ঐক্যমত্যের আভাস মিলেছে।

গাজার ভবিষ্যৎ

আব্রাহাম চুক্তির সম্প্রসারিত সংস্করণের নাম দেওয়া হয়েছে 'আব্রাহাম শিল্ড ফ্রেমওয়ার্কে' (আব্রাহাম সুরক্ষা অবকাঠামো)। এতে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের দিন থেকে ('ডে আফটার' নামে অভিহিত) গাজার শাসনব্যবস্থা কীভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত, তা বর্ণনা করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, গাজার 'নিরস্ত্রীকরণের' পর টেকনোক্র্যাটরা এর প্রশাসনের দায়িত্ব নেবেন। তাদের নিয়োগ দেবে আরব দেশগুলো। এই ব্যবস্থাপনায় ফিলিস্তিনিদের সম্মান ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষা পাবে।

ইসরায়েলি সরকার বলছে—এই চুক্তি সফল হলে রিয়াদ ও আবুধাবি নিজ নিজ জনগণকে বোঝাতে পারবে যে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা মানে এই নয় যে ফিলিস্তিনিদের 'ব্রাত্য' করে দেওয়া হচ্ছে। বরং এটি যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তিকে প্রাধান্য দেওয়ার কৌশলগত বাজি। এ মুহূর্তে আরব দেশগুলো কমবেশি সবাই মেনে নিয়েছে, ইরানই এ অঞ্চলে 'প্রকৃত দৈত্য'।

কিন্তু, তাদের সঙ্গে ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে না পারলে এক পর্যায়ে দেখা যাবে ওই 'দৈত্য'র সঙ্গে তারা শুধু একাই লড়াই করছে, যেমনটা এখন লড়তে হয়েছে তাদেরকে।

এক প্রজন্ম আগে, নিরাশাবাদীরা বলেছিল মিশর-ইসরায়েলের মধ্যে কখনো শান্তি আসবে না। কয়েক দশক পর, দুই দেশের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

WyOcjC2dfUuIN7QRsD60FnQTzBgCNqObvYm-7_dPqrw.jpg
গাজার ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনিদের চলাচল। ছবি: এএফপি

সমালোচকরা আব্রাহাম চুক্তিকে তুচ্ছ করেছিলেন, কিন্তু আমিরাত-ইসরায়েলের বাণিজ্য ইতোমধ্যে পাঁচ বিলিয়ন ডলার পার হয়েছে।

এবার তেহরানকে বশ মানাতে সৌদি আরব-ইসরায়েলের চুক্তি আরও বিস্তৃত ও সাহসিকতায় পূর্ণ হবে। এবং এ ধরনের চুক্তি দুই দেশের নেতাদের নাগালের মধ্যে আছে বলেও সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়।

আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জটিল প্রশ্নের উত্তর এখন শুধু জেরুজালেম, রিয়াদ ও আবুধাবির হাতে নেই, বরং এ অঞ্চলের প্রতিটি বাস্তববাদী দেশের হাতে রয়েছে এর চাবিকাঠি।

সুযোগ কখনো চিরস্থায়ী হয় না; এগুলো শিগগির উধাও হয়ে যায়।

'যদি মধ্যপন্থি আরব দেশগুলো দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতে থাকে, তাহলে ইরান তাদের বিধ্বংসী পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে থাকবে,' বলেও সম্পাদকীয় মন্তব্য করা হয়।